ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রায়হান হত্যা: আকবরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর

 সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২১
রায়হান হত্যা: আকবরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর

সিলেট: সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি বরখাস্ত (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (২ জুন) দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা আদালতে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে জামিন আবেদন করেন আকবরের আইনজীবী।

শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. আব্দুর রহিম জামিন নামঞ্জুর করেন।

সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নওশাদ আহমদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সিলেট নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান উদ্দিনকে ১০ অক্টোবর রাতে কোতোয়ালির বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ফাঁড়িতে রাতভর বেঁধে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়। গুরুতর অবস্থায় ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যান এসআই রায়হান। এরপর ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে আসে অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশের করা তদন্ত কমিটি রায়হান নির্যাতনে মারা যাওয়ার সত্যতা পায়।

ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এসএমপির তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।  

এরপর ১৯ অক্টোবর ফাঁড়ির তিন কনস্টেবল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের বর্ণনা ও মূল হোতা এসআই আকবরসহ নির্যাতনকরীদের নাম বলেন। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইর উপর বর্তায়।

১০ নভেম্বর সকালে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে খাসিয়াদের সহযোগিতায় পুলিশ আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীসময়ে জেলা পুলিশ আকবরকে পিবিআই কাছে হস্তান্তর করে।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’(সেকেন্ড-ইন-কমান্ড) পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।

আদালত সূত্র জানায়, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। রায়হানকে নির্যাতনে তিনি সরাসরি জড়িত না থাকার বিষয়টি উপস্থাপন করে তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করেন।

শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, বরখাস্ত এসআই আকবর দণ্ডবিধি ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্ত। বিচার চলাকালে হত্যা মামলার কোনো প্রধান আসামিকে জামিন দেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ঘটনার পর আকবরের পালিয়ে যাওয়া, অতঃপর কীভাবে ধরা হয়, সে বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করেন।

বাংংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২১
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।