ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল সেদিন।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শুনানির জন্য পেপার বুক প্রস্তুত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে না ওঠায় প্রধান বিচারপতি এখনো মামলাটি শুনানির জন্য কোনো বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেননি। তাদের আশা, শিগগিরই এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি শুরু হবে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হলি আর্টিজান হামলা রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গিরা গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল। সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। নিম্ন আদালতে সাত জঙ্গিকে দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ মামলার শুনানির বিষয়ে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য পেপার বুক গত বছরই প্রস্তুত হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিয়মিত আদালতের কাজ বিঘ্ন ঘটায় শুনানি শুরু হয়নি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই একটি বেঞ্চ নির্ধারণের মাধ্যমে এ মামলা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতি) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।
এ মামলার বিচার শুরুর সময় আট আসামির ছয়জন কারাগারে ছিলেন। বিচার চলাকালে বাকি দু’জন গ্রেফতার হন। আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ), ৭,৮,৯,১১,১২ ও ১৩ ধারায় চার্জগঠন করা হয়। মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন অত্র আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণেও উঠে আসে এ ঘটনার উদ্দেশ্য ও নৃশংসতার কথা। যেখানে বলা হয়, ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এর ফলে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য পরিচিত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়। ’
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়,‘বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েম এর লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় ও দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ’
‘নিরপরাধ দেশি-বিদেশি মানুষ যখন রাতের খাবার খেতে হলি আর্টিজান বেকারিতে যায়, তখনই আকস্মিকভাবে তাদের ওপর নেমে আসে জঙ্গিবাদের ভয়াল রূপ। জঙ্গি সন্ত্রাসীরা শিশুদের সামনে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিরা নিথর দেহগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হলি আর্টিজান বেকারি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২১
কেআই/এসআই