ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বুয়েটের ‘অক্সিজেট’ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে হাইকোর্টের পরামর্শ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২১
বুয়েটের ‘অক্সিজেট’ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে হাইকোর্টের পরামর্শ

ঢাকা: করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে বুয়েটের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ নামক স্বল্প মূল্যের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইসের অনুমোদনের বিষয়ে ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তার মুখ্য সচিবকে লিখিতভাবে জানান। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানান।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা এটির অনুমোদন দিচ্ছে না-এ বিষয়টি সোমবার (৫ জুলাই) আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনিক আর হক।

তখন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক বেঞ্চ এমন পরামর্শ দেন।

অক্সিজেট সি-প্যাপ প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছেন বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।

গত ১১ মে বুয়েটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই যন্ত্র কোনো প্রকার বিদ্যুৎ শক্তি ছাড়াই শুধুমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার বা মেডিক্যাল অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে।

এতে আরও বলা হয়, করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্বল্প মাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন পড়ে যা রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করতে পারে। করোনা প্রকোপ শীর্ষে থাকা অবস্থায় আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র পাওয়া যায় না। এছাড়াও এ যন্ত্রগুলো ব্যয় বহুল ও ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। সহজে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেট সি-প্যাপ এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।

অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সুক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভাল্ভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার/মিনিট গতিতে সরবরাহ করে। মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে এটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে।

দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায়, চিকিৎসা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেট সি-প্যাপ রোগীদের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) গড়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা জানিয়ে বলা হয়, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে অক্সিজেট সি-প্যাপের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে অক্সিজেট সি-প্যাপ এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই যন্ত্রটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার স্বল্প মূল্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে অক্সিজেটের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এ যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিজিডিএ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলেছে, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।  

তখন আদালত বলেন, সরকারের ক্রয়নীতি আছে। বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।

এ সময় আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, এই ধরনের ডিভাইস নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি (আইনজীবী) এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। তার নজরে আনার জন্য মুখ্য সচিবকে চিঠি দেন।

পরে আইনজীবী অনিক আর হক জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছি। মুখ্য সচিবকেও জানাবো। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

আরও পড়ুন>>

** করোনারোগীর জন্য বুয়েটের ‘অক্সিজেট’, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২১
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।