ঢাকা: চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নগরীর অন্য কোনো জায়গায় তা স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৮ জনকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম এ নোটিশ দেন।
বুধবার (১৪ জুলাই) ৭ দিনের সময় দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেল সচিব, রেলওয়ের ডিজি, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল জোনের জিএম, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির সিইও, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যন ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়।
পরে হাসান এম এস আজিম বলেন, আমরা পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা চাই। আবার হাসপাতালও চাই। এ কারণে সিআরবি থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, গণমাধ্যমের খবর অনুসারে সিরআরবির ৬ একর জমিতে ৫০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে এক বেসরকারি কোম্পানীর সঙ্গে গত ১৮ মার্চ রেলওয়ে একটি চুক্তি করে। চট্টগ্রম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও পরিবেশগত সংরক্ষিত এলাকার তৈরি করা তালিকায় সিআরবি রয়েছে। তাই সিআরবিকে সংরক্ষরণ করা জরুরি।
সিরআরবি এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে শত বছরের অধিক পুরানো গাছ কাটতে হবে। এতে পরিবেশগত মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এছাড়া সিরআরবির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। তাই প্রকল্পটি সিআরবি এলাকা থেকে পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষতি হবে না নগরে এমন স্থানে স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নোটিশে অনুরোধ করা হয়েছে।
৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নেটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গত ১২ জুলাই সিআরবিতে আধুনিক হাসপাতালটি নির্মাণ না করে উপযুক্ত স্থানে নির্মিত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিবৃতি দাতারা হলেন- শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, প্রফেসর ড. অনুপম সেন, প্রফেসর ড. সিকান্দার খান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, প্রফেসর আবুল মনসুর, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর হরিশংকর জলদাস, অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম, ডা. চন্দন দাশ, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, প্রফেসর অলক রায়, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরের মাধ্যমে জানতে পারলাম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিআরবি-সাতরাস্তার মোড় এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন করেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। খবরটি চট্টগ্রামের আপামর মানুষকে অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। এর কারণ বহুবিধ।
হাসপাতালে স্বভাবতই অসুস্থ মানুষদের সমাগম ঘটবে যা এলাকার পরিবেশকে প্রভাবিত করবে এবং এতে সাধারণের স্বাস্থ্য, প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এতে প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। আমাদের দেশে একজন রোগীকে ঘিরে হাসপাতালে বহুজনের আগমন স্বাভাবিক ঘটনা। এতে এলাকার নির্জনতা তথা স্বাভাবিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন হবে।
কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয় এটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ঐ এলাকায় ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিলেন, তদুপরি সিআরবি ভবনটি দেশের ব্রিটিশ বা কলোনিয়াল স্থাপত্যের বিলীয়মান নিদর্শনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি। এটি স্থাপত্যকলা ও ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব বিবেচনা থেকেই এলাকাটিকে বাংলাদেশ সরকার সংবিধানের ২য় ভাগের ২৪ ধারা অনুযায়ী ঐতিহ্য ভবন ঘোষণা করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২১
ইএস/কেএআর