ঢাকা: সমাজে ভদ্রতার মখোশের আড়ালে অনৈতিক কাজ করছেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ-এর মতো লোকেরা। এগুলো খুবই অন্যায় কাজ, যা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক দু’টি মাদক মামলায় মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ-এর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দু’জন বিচারক।
রোববার (১ আগস্ট) রাতে পৃথক অভিযানে গুলশান থানার বারিধারার ৯ নম্বর রোড এলাকার বাসা থেকে পিয়াসাকে ও মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসা থেকে মডেল মৌকে আটক করা হয়। র্যাব বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় দু’টি মামলা দায়ের করে। দু’টি মামলায় সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
এর মধ্যে পিয়াসার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দীক রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পিয়াসার বাসা থেকে ৭৮০ পিস ইয়াবা, ছয় লিটার বিদেশিসহ মোট আট লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানায়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতঃ ওই বাসার নিচে গানের আসর বসায় ও লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করে। আসামির সঙ্গে ঢাকা শহরের আরও মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। আসামির কাছ থেকে পাওয়া মাদকের উৎস, অর্থের যোগানদাতা, মাদক সরবরাহকারী এবং আসামির সহযোগীদের তথ্য সংগ্রহ ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন।
রিমান্ড শুনানিতে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ওই আসামি নিজের বাড়িতে গানের আসর আয়োজন করে। সেখানে সমাজের বিত্তবান পরিবারের যুবকদের আহ্বান করে আমোদ-ফুর্তি করে। এর মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদকসহ অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা যুব সমাজকে মাদকাসক্ত ও মেধাশূন্য করে ফেলছে। এ ধরনের ব্যক্তিরা ভদ্র মুখোশের আড়ালে অনৈতিক কাজ করছে। এগুলো অত্যন্ত অন্যায়, যা বন্ধ হওয়া দরকার।
অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আরিফ হোসেন মজুমদার রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। তিনি বলেন, এ মামলার আসামি পিয়াসা এলিট ফ্যামিলির লোক। ভালো একটি কোম্পানিতে সে চাকরি করে। সে কোনো ক্লাব বা বারের সদস্য নয়। ইতোপূর্বে কখনো তার বিরুদ্ধে মাদকের কোনো মামলা হয়নি। তাই এ অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো। আমি তার পক্ষে রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা জানাচ্ছি। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেওয়া হোক। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে মৌ-এর বিরুদ্ধে ডিবির পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুরে মৌ-এর বাসায় অভিযান চালিয়ে ৭৫০ পিস ইয়াবা, ১২ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। আসামি একজন নারী মাদক ব্যবসায়ী। সে তার ফ্ল্যাটে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের নাইট পার্টির কথা বলে ডেকে এনে মাদক বিক্রয় করে যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছে। আসামির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহের উৎস, ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন ও সহযোগী আসামির নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারে আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এ নারী একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। বাসায় গান-বাজনার আয়োজন করে সেখানে অনেককে আহ্বান করে। ইয়াবা মরণব্যাধি এবং সরকার এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। তাই এ মাদকের উৎস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে তদন্ত কর্মকর্তার প্রার্থীর রিমান্ড মঞ্জুর করা একান্ত আবশ্যক।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিল সিদ্দিকী বাপ্পী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এ আসামি পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী। তিনি তিন সন্তানের জননী। তার ছোট সন্তানের বয়সও ২০ বছর। তাই এ বয়সী একজন নারীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সাজানো। বরং তিনি উচ্চ মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার। তাই আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামির রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ দুই মামলার রিমান্ডের আদেশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এ আসামিরা বাসার নিচে গানসহ বিভিন্ন পার্টি আয়োজন করে। সেখানে বিত্তবান যুবকদের আহ্বান করে মাদক বিক্রয়সহ বিভিন্ন অন্যায় কাজে জড়ায়। এসব ব্যক্তিরা সমাজে ভদ্র মখোশের অন্তরালে অনৈতিক কাজ করছেন, যা বন্ধ হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২১
কেআই/আরবি