ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুই শিশুকে দণ্ড: ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
দুই শিশুকে দণ্ড: ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট

ঢাকা: নেত্রকোনায় বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়ার লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ব্ল্যাস্টের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।

বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে দণ্ডিত দুই শিশুকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে এ আবেদন করেন আইনজীবী।

একইদিন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, নেত্রকোনায় শিশুদের সাজা দেওয়ার বিষয়টি নজরে আনার পর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে নেত্রকোনার ডিসিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেন। আমি নেত্রকোনা ডিসিকে টেলিফোনে আদালতের আদেশের বিষয়টি অবগত করি। তিনি জানান ওই দুই শিশুকে ইতোমধ্যে আপিল শুনানি করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনায় জেলা প্রশাসক ওই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। সেই ব্যাখ্যা ২৬ আগস্টের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী শিশির মনিরের আবেদনে বলা হয়, এই রিপোর্ট পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। The State vs. Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs, Government of Bangladesh and Ors, reported in 72 DLR 700 মামলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, শিশু আইনের অধীন মোবাইল কোর্টের কোনো এখতিয়ার নেই। ফলে, অত্র সাজা এখতিয়ার বহির্ভূত।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭২ সালের সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলসের (সংশোধিত-২০১২ পর্যন্ত) ১১ ক অধ্যায়ের ১০ বিধি মোতাবেক এই চিঠি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী আবেদন হিসেবে বিবেচনা করে পত্রিকার প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে উল্লেখিত শিশুদের তাৎক্ষণিক মুক্তির আদেশ দিতে বা ক্ষেত্রমতে উপযুক্ত আদেশ প্রদানে আদালতের একান্ত মর্জি হয়।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দুই শিশুকে এক মাসের দণ্ডাদেশ দিয়েছেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া।

গত রোববার রাতে আটপাড়ায় সুলতানা রাজিয়া তার নিজ কার্যালয়ে ওই দণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে শিশু দুটিকে গাজীপুরে অবস্থিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক–বালিকা) পাঠানোর নির্দেশ দেন। শিশু দুটি গত মঙ্গলবার পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলা কারাগারে ছিল।

শিশু দুটির বাড়ি আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নে। তাদের মধ্যে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির বয়স ১৫ বছর (জেএসসির নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী)। ছেলেটিও সমবয়সী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে তারা দুজন লেখাপড়ার পাশাপাশি ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ছেলেটি তা প্রত্যাখ্যান করে। গত ঈদুল আজহায় তারা গ্রামের বাড়িতে আসে। এরপর বিয়ের দাবিতে মেয়েটি গত সপ্তাহে বুধবার রাত থেকে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়। নিরুপায় হয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় উভয় পরিবার তাদের বিয়ের আয়োজন করে।

বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া সেখানে পুলিশ পাঠান। এরপর দুই জনকে তার কার্যালয়ে এনে রাত আটটার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ অনুযায়ী, দুই জনকেই এক মাসের জন্য আটকাদেশ দিয়ে শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।