ঢাকা: আত্মহত্যা প্ররোচনার ষড়যন্ত্রমূলক মামলার অভিযোগ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
ওই মামলায় গুলশান থানা পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে বুধবার (১৮ আগস্ট) আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী।
মামলার বাদী অভিযোগের পক্ষে কোনো দালিলিক, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, মৌখিক বা আইনানুগ সাক্ষ্য বা ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদনে মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনায় বসুন্ধরা এমডির কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। সে কারণে মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
এরপর আদালত এই প্রতিবেদনের ওপর ২৯ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে মামলার বাদীকেও নোটিশ করা হয় ধার্য তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ওইদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় ১৭ আগস্ট। মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন।
আদালত বাদীর বক্তব্য শোনার পর নথি পর্যালোচনা করে পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে বুধবার আদেশ দেন। আদেশে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু মামলার তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গ্রহণ করা হলো। একইসঙ্গে যৌক্তিক কারণ না থাকায় বাদিনীর নারাজির আবেদন খারিজ করা হলো। আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এই আদেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য যাকে আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনি আদতেই অভিযুক্ত নন এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি বাড়িতে মারা যান কলেজছাত্রী মুনিয়া। তার মৃত্যুর পরপরই তড়িঘড়ি করে তার বোন নুসরাত জাহান বসুন্ধরা এমডিকে আসামি করে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলায় তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।
প্রায় তিন মাস বিস্তৃত তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে বসুন্ধরা এমডির কোনো সম্পৃক্ততা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
আদালতে পুলিশের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, মামলাটি তদন্তকালে সংগৃহীত প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল ফ্ল্যাট মালিকসহ অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা মুনিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসব তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের যাপিত জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলীও সংগ্রহ করেন। সার্বিক তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার বাদীনি কর্তৃক ভিকটিমের আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালতও সময় নিয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেন। এরপর আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
কেআই/