ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কুড়িগ্রামের সেই ডিসিসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
কুড়িগ্রামের সেই ডিসিসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

ঢাকা: কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেওয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনসহ তিন কর্মকর্তাকে পদায়ন না করতে এবং অপর কর্মকর্তার পদায়ন স্থগিতে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ আগস্ট) কুড়িগ্রামের ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম এ রিট করেন।

তার আইনজীবী ইশরাত হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের অভিযোগে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। প্রায় এক বছর হয়ে গেল তারা জামিনও নিলেন না। এখন তারা আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। কিন্তু তাদের একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ (ডিসি) চার কর্মকর্তাকে শাস্তির সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে জেলা প্রশাসনের লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। পরে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বাড়িতে ‘আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা’ পাওয়ার ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে, সহকর্মী ও পরিবারের দাবি, একটি পুকুর সংস্কার নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন করায় জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ফাঁসিয়েছেন। এরপর এক রিটের শুনানি নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।

এছাড়া কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে থানায় করা আরিফুলের অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে থানায় মামলা করেন আরিফুল।

এদিকে, দেশব্যাপী ওই ঘটনার ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার পর ওই ঘটনা তদন্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন এবং দুই সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

ঘটনার পরপরই সুলতানা পারভীনকে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হলেও কোনো পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। রাহাতুল ইসলাম বর্তমানে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন। রিন্টু বিকাশ চাকমাও এখন কোনো দায়িত্বে নেই।

সম্প্রতি ওই ঘটনায় চার কর্মকর্তাকে শাস্তির সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তদন্ত ও শুনানি করে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনকে লঘুদণ্ড হিসেবে দুই বছর বেতন বাড়ানো স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়।

অপরদিকে, তৎকালীন ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের পদাবনতির সুপারিশ করা হয়েছে। আর এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলামের তিন বছর বেতন বাড়বে না। এছাড়া সেই রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা সহকারী কমিশনার (এসি) রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুতের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের শাস্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে নথি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, তবে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষ হলেই শাস্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। রাষ্ট্রপতি চাইলে দণ্ড কমাতে বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
ইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।