ঢাকা: প্রতারণা করে গ্রাহকের ১১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ই-অরেঞ্জের সাবেক চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) নাজমুল আলম রাসেলের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৯ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর ছিদ্দিক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম আসামিকে আদালতে হাজির করে তাকে গ্রেফতার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। প্রথমে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন রাসেলের পক্ষে আইনজীবী শান্তনু ধর রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
শান্তনু ধর বলেন, নাজমুল আলম রাসেল নিজেই একজন ভিকটিম। চার মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আমান উল্লাহ। তারপরও তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় তাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে সেই মামলায় তার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
তিনি আরও বলেন, তিনি তো চাকরি ছেড়েই দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেনো মামলা হবে? তাকে কেনো রিমান্ডে নিতে হবে? রাসেল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করছি।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষে গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন এর বিরোধিতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রাসেলের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এ মামলায় গত ২৩ আগস্ট ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান এবং চিফ অপারেটিং অফিসার আমান উল্লাহর পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় আমান উল্লাহকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ২৪টি ক্রেডিট কার্ড, ১৬ লাখ টাকা এবং গাড়ি জব্দ করা হয়।
আর মামলা দায়েরের পরই গত ১৭ আগস্ট সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমানে আদালতে এসে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৭ আগস্ট সকালে মামলাটি দায়ের করেন ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার মো. তাহেরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক। এসময় প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত থেকে তার সঙ্গে সাক্ষ্য দেন।
মামলায় তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি গত ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জে অগ্রিম টাকা দেন। তবে ই-অরেঞ্জ নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ করেনি। টাকাও ফেরত দেয়নি। নিজেদের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে কয়েকবার নোটিশ দিয়েছে। সময় চেয়েছে। কিন্তু পণ্য ও টাকা দেয়নি। সর্বশেষ তারা গুলশান-১ এর ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বর ভবনে অবস্থিত অফিস থেকে পণ্য ডেলিভারির কথা বললেও তারা ডেলিভারি দেয়নি। এছাড়াও তারা যে বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করেছিল, সেগুলোর টাকা আটকে রাখায় আউটলেটগুলো ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, এ করোনাকালীন সময় আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাচ্ছি না, বরং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। এছাড়াও আজ পর্যন্ত তারা ভুক্তভোগীদের কোনো পণ্য ডেলিভারি না করে এক লাখ ভুক্তভোগীর প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
কেআই/কেএআর