ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সমিতির প্যাডে বিএনপি সমর্থক এ আইনজীবীর বিবৃতিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা রোববার সুপ্রিম কোর্ট বারে বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
প্রথমে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সমিতিতে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ’র নেত্বত্বে সমিতি ভবনের এক নম্বর হলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমিতিতে নির্বাচিত সরকার সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে সম্পাদক যখন সংবাদ সম্মেলন করেন তখন তার কক্ষের বাইরে সভাপতির কক্ষের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান একটি মীমাংসিত সত্য। ১৯৭১ সালে দিশেহারা এ জাতির ক্রান্তিকালে তৎকালীন মেজর জিয়া যদি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করতেন ও চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে আজকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতো কিনা সেটাই যেখানে প্রশ্ন, সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গনে শহীদ জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন উত্থাপন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবমাননার শামিল।
পরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জিয়াউর রহমানসহ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কনফেডারেশন করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত, তখন জিয়াউর রহমান দেশে অরাজকতা সৃষ্টিকারী গণবাহিনী ও সর্বহারা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী সৈনিক জিয়া ও মোশতাকের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য সফল করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী খুনি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে গুপ্তহত্যা, রাজনীতিবিদ হত্যাসহ এহেন কর্মকাণ্ড নেই যা করেনি। তিনি সমিতির সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলনেরও নিন্দা জানিয়ে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারকে (সমিতি) দলীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দল নিরপেক্ষ সমিতি। আমর যারা বিভিন্ন সময় নির্বাচিত হয়েছি, আমাদের কাজ হচ্ছে সদস্যদের সমস্যা দেখা এবং তাদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করা। যারা নির্বাচিত সদস্য তারা অনেকেই রাজনীতি করেন। রাজনীতি করা ব্যক্তিরাই সভাপতি-সম্পাদক হন। ইতিপূর্বে কখনো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দলের বিবৃতি-বক্তৃতা দেওয়া হয়নি। সভাপতি- সম্পাদক তার নিজের বক্তব্য দেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে দেওয়া এটা উনি প্রথমবার করেছেন। এটা আমাদের যে দীর্ঘদিনের ঐহিত্য, একসঙ্গে কাজ করার যে ঐতিহ্য, সেটাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
তিনি বলেন, অব্যশই সবাই রাজনীতি করবে। প্রত্যেকেরই একটা রাজনৈতিক বক্তব্য আছে। কিন্তু সমিতি আর রাজনীতিকে আলাদা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯,২০২১
ইএস/এমএইচএম