ঢাকা: বদলি জেল খেটে মুক্তির পরে গাড়িচাপায় মারা যাওয়া মিনুর বিষয়ে উচ্চ আদালত বলেছেন, আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কারাগারে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি দরকার।
মিতুর মৃত্যুর মামলা এবং তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর মামলার নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তা হাজিরের পর বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।
চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। তার বদলে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তার নামেই মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়।
উচ্চ আদালতে আবেদনের পর গত ৭ জুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই ঘটনায় চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ নাসের, আইনজীবী নুরুল আনোয়ার, আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী, আইনজীবী পুষ্পেন্দ বিকাশ কানুনগো ও আইনজীবী সহকারী সৌরভ হোসেনকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সে অনুসারে ২৮ জুন তারা হাজির হন। ওই পাঁচজনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। এ দিন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির একটি রুল জারির আবেদন জানান। পরে আদালত রুল জারির করেন।
রুলে দেশের সব জেলখানায় কয়েদিদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ১৬ জুন বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। তবে গত ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।
পরবর্তী তারিখে আদালত নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। বুধবার তারা হাজির হন। যুক্ত ছিলেন তলব করা আইনজীবীরাও।
এ সময় আদালত তদন্ত কর্মর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কেন মিতু রাত ৩টায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেলেন। তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অথবা শুধুই আটকরাই প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কি না, নাকি অন্য কেউ আছে-এসব বিষয় সিরিয়াসলি তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নেবেন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আর আইনজীবীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আরিফুর রহমান।
রুলের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এখনও রুলের জবাব নেই। আপনি দৃষ্টি দেবেন?’
জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘মাই লর্ড। অব্যশই দেব। ’
আদালত বলেন, ‘এটা কি দেশের জন্য ভালো হবে?’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘হবে মাই লর্ড। সবাই তো দেশের মঙ্গল চাই। ’
আদালত বলেন, ‘চান তো?’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আনডাউটেডলি মাই লর্ড। ’
আদালত বলেন, ‘আর কত মিনু বেগম সৃষ্টি হচ্ছে, হবে। ’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আছে মাইলর্ড। সেগুলো তো অপ্রকাশিত। ’
আদালত বলেন, ‘এটার জন্য আমরা রুল দিয়েছি। এটা পিটিশনারের কোনো ইন্টারেস্ট না। ’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘ইন্টারেস্ট হলো সিটিজেনের। ’ আদালত বলেন, ‘হ্যাঁ সিটিজেনস। আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে। ’
সারওয়ার হেসেন বলেন, ‘মিনু লোভে পড়েছে। কিছু খাদ্য সামগ্রী এবং কিছু টাকার। এখন মাইলর্ড কেউ যদি আত্মাহুতি দেয়, আপনি-আমরা সকলে এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো?’
আদালত বলেন, ‘এই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তো (কারাগারে) বায়োমেট্রিক। ’ সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘জ্বি মাই লর্ড, এটা করলে ভালো হবে। ’
আদালত বলেন, ‘বায়োমেট্রিক হলে শনাক্ত হয়ে যাবে। তখন এগুলো করতে পারবে না। কাজেই এ রুলের ব্যাপারে দৃষ্টি দেন। ’
সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলবো। উনি শুনানি করতে পারেন। ’
পরে আদালত রুল শুনানির জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। ওই দিন এ ঘটনায় তলব করা চট্টগ্রামের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
ইএস/জেএইচটি