ঢাকা: জাপান থেকে আসা সেই দুই মেয়ের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে একদিন থাকবে বাবা এবং পরের দিন মা থাকবে।
২৮ সেপ্টেম্বর শুনানি মুলতবি করে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এই সময়ের মধ্যে উভয়পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আশা করেছেন আদালত। আর এই সমঝোতা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাবার পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদকে। আর রোকনউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসবেন মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে থাকা এবং বাইরে ঘোরাফেরা করার অনুমতি দিয়েছিলেন জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো। একইসঙ্গে তাদের বাবা বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফও আলাদাভাবে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে পারবেন।
আদালতে এরিকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলে আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, মোস্তাফিজুর রহমান খান।
এর আগে শিশির মনির জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।
পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যন করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ইমরান শ্রীলংকা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে কোভিড পরীক্ষা করান এবং এর ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান কোভিডের ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান।
অবশেষে ২৭ জুলাই মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাধা অবস্থায় এরিকোকে তার মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় এরিকো সন্তানদের নিজের জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।
এরপর শুনানি নিয়ে ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট ওই দুই শিশুকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এক মাসের জন্য তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন উচ্চ আদালত। এর মধ্যে ২২ আগস্ট (রোববার) রাতে দুই শিশুকে হেফাজতে নিয়ে সিআইডি তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। পরদিন ২৩ আগস্ট বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। দুইপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন। আদেশে তাদেরকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে বলেন। এর মধ্যে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এরিকো এবং ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইমরান তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে।
৩১ আগস্ট শিশুদের আদালতে নিয়ে আসার পর তাদের কথা শোনেন দুই শিশুকে আদালতে আনার পর শুনানি শেষে আদালত ১৫ দিন গুলশানের একটি ভাড়া করা বাড়িতে শিশুদের রাখতে নির্দেশ দেন। সেখানে থাকতে পারবেন তাদের বাবা-মাও। ওই ফ্ল্যাটের ব্যয় মা-বাবা সমান বহন করবেন। পুলিশকে নিরাপত্তা এবং তত্ত্বাবধান করতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
ইএস/এএটি