ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

যশোর কারাগারে ২ ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২১
যশোর কারাগারে ২ ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর

যশোর: ১৮ বছর পর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রায় লক্ষীপুর গ্রামে দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।  

ফাঁসি কার্যকর হওয়া দু’জন হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষীপুর গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু (৫০) ও একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০)।

 

সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জোড়া ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বিষয়টি বাংলানিউজকে জানান, ফাঁসি কার্যকরের পর অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে টানা ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমের স্বজনরা।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বাংলানিউজকে জানান, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এই দু’জনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শনিবার ও রোববার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাদের দুইজনের স্বজনেরা তাদের সঙ্গে দেখা করে। তাদের দুইজনের শেষ ইচ্ছা অনুয়ারী দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাদের ইচ্ছা অনুয়ায়ী শনিবার গরুর কলিজা, ইলিশ মাছ খাওয়ানো হয়। রোববার গ্রিল ও নান রুটি আর সোমবার মুরগির মাংস দই আর মিষ্টি খাওয়া হয়।  

কারাগারের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যা বের নজরদারি বাড়ানো হয়। কারাগারের ১৩ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া পুলিশ ও র্যা বের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন কারাগারের প্রধান ফটকে। রাতে একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, সিভিল সার্জন দিলীপ শেখ আবু শাহীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান।  

রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন  আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পড়িয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। রাত ১০টা ৪৫মিনিটে প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু (৫০) এবং এর ৫ মিনিট পরে একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০) ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমান, কাদেরসহ ৫ জন জল্লাদ অংশ নেয়।  

ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় কালু ও আজিজের ইউনিয়ন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে কালু ও আজিজুলের ৭ জন সদস্য মরাদেহ নিতে কারাগারে আসেন। এসময় তাদের দুইজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে ছিল।  

চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজুল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রায়লক্ষীপুর ঈদগা মাঠে একসঙ্গে দুই জনের জানাযা শেষে তাদের পারিবারিক পৃথক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দুইজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলাকাটা হয় ওই দুই নারীর। এ ঘটনায় নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম খুনের পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন।  

মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুইজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুইজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন আসামি মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এরপরে চুয়াডাঙ্গা কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি চুয়াডাঙ্গা কারাগার থেকে ২০০৭ সালের ১০ আগস্ট যশোর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন। এ বছরের ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন।

>>> ২ তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: মিন্টু-কালুর ফাঁসি আজ

বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
ইউজি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।