ঢাকা: বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় পলাতক চার আসামির সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
চার আসামি হলেন- আল জাজিরায় সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মূল হোতা জুলকারনাইন ওরফে সামি, সুইডিশ প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক নেত্র নিউজ সম্পাদক তাসনীম খলিল, ব্লগার আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী স্বপন।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম এ তথ্য জানান।
এর আগে, সোমবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি সাতজন। তিন আসামি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার মো. দিদারুল আলম ভুঁইয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জামিনে ছিলেন। এদিন তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মোস্তাক আহমেদকে অব্যাহতি দেন আদালত। একইদিনে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও ফেসবুক আইডি ফিলিপ শুমাখারকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আফছর আহমেদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন।
জানা যায়, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করতেন। আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার চালিয়েছে। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মোস্তাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর গ্রেফতার হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল আলম ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মোস্তাক কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ মে মোস্তাক মারা যায়। মোস্তাকের মৃত্যুর পর হাইকোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পান কার্টুনিস্ট কিশোরও।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন সর্দার আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানে কার্টুনিস্ট কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল এবং লেখক মোস্তাককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি ও মিনহাজ মান্নান, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান, তাসনীম খলিল ও মো. ওয়াহিদুন্নবীসহ ৮ জনের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছিল।
চার্জশিটে আল-জাজিরা টেলিভিশনে সরকার প্রধান এবং সেনা প্রধানকে নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনে প্রধান চরিত্র হিসেবে সামিউল ইসলাম খান ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় মামলাটি পরে অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে এবার ৭ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
কেআই/জেডএ