ঢাকা: ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮) যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন ও বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং এ সংক্রান্ত সংস্কার ও গবেষণা করে যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এ কমিটি গঠনের আদেশ জারি করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং এ সংক্রান্ত সংস্কার ও গবেষণা করে যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের জন্য আইনমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে চেয়ারপার্সন এবং আইন ও বিচার বিভাগের সিচিব মো. গোলাম সারওয়ারকে কো-চেয়ারপার্সন করে নয় সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করে দেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—অতিরিক্ত সচিব হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, যুগ্মসচিব বিকাশ কুমার সাহা ও কাজী আরিফুজ্জামান, উপসচিব শেখ গোলাম মাহবুব, যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর, উপসচিব গাজী কালিমুল্লাহ ও যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. মুনিরুজ্জামান।
কমিটির কার্যপরিধি
(ক) ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং এ সংক্রান্ত সংস্কার ও গবেষণা এবং যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়া।
(খ) ফৌজদারি কার্যবিধি বাংলা ভাষায় প্রণয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়া।
(গ) ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বর্তমানে ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়া।
(ঘ) ফৌজদারি কার্যবিধি এবং এ সংক্রান্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়া।
কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্যকে কো-অপ্ট করতে পারবে। কমিটি যত দ্রুত সম্ভব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে পর্যালোচনা সংক্রান্ত সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
কমিটি গঠনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধি দ্বারা বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিন প্রকৌশল ও ন্যানোপ্রযুক্তির এই যুগে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা পরিচালনা করা দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ। এ কারণে ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং জনগণের আইনি অভিগম্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং এ সংক্রান্ত সংস্কার ও গবেষণা করে যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন ও বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
আইন মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রযোজ্য সব আইনকে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে জারিকৃত ল’স কন্টিনিয়াস ইনফোর্সমেন্ট অর্ডার দ্বারা একই তারিখে জারিকৃত প্রক্লামেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স এর বিধান সাপেক্ষে অব্যাহত রাখা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৯ অনুচ্ছেদ দ্বারা অব্যাহত থাকা উক্ত আইনগুলোকে হেফাজত করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে প্রচলিত ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তান আমলে প্রণীত অনেক আইন অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত বাংলাদেশ ল’স (রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার পূর্বের আইনগুলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও অভিযোজনপূর্বক বহাল রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ