ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন মোট এক হাজার ৯৮৭ জন।
এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৯৩৩ জন এবং বাকি ৫৪ জন নারী কয়েদি।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির কনডেম সেলের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে কারা অধিদপ্তরে চিঠি দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর এ আইনজীবীর চাহিদা অনুসারে তথ্য দেয় কারা অধিদপ্তর।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য কনডেম সেল রয়েছে মোট দুই হাজার ৫৯৯টি। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদির জন্য দুই হাজার ৪৫৬টি এবং নারীদের জন্য রয়েছে ১৪৩টি সেল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব সেলে মোট কয়েদি ছিলেন এক হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদি ছিলেন এক হাজার ৯৩৩ জন। আর নারী কয়েদি ৫৪ জন।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সেলের সংখ্যা অপ্রতুল হলে একাধিক কয়েদিকে এক সঙ্গে রাখা হয়। তবে সাধারণত একটি কনডেম সেলে একজন রাখা হয়।
কয়েদিদের বিনোদন ও খেলাধুলার বিষয়ে বলা হয়, কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের চিত্ত বিনোদনের জন্য বই-পুস্তক ও পত্রপত্রিকা পড়ার এবং শরীর চর্চার সুযোগ দেওয়া হয়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে এ তথ্য দিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ প্রতিবেদন নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল তা দাখিল করবেন।
প্রতিবেদন চেয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ অক্টোবর পর্যন্তন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
রিট আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ, সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন না মঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দী রাখা হয়।
শিশির মনির আরও জানান, গত ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ডেথ রেফারেন্স জটে বছরের পর বছর কনডেম সেলে আসামিরা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগে চলতি বছরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে। অর্থাৎ, ২০২১ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে ২০২৬ সালে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
ইএস/এমএমজেড