ঢাকা: রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণ নিয়ে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের বক্তব্য বিচার বিভাগের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, তার (কামরুন্নাহার) বক্তব্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ভুল নির্দেশ যায়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তা নেওয়া হয়েছে। তাকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় যে, এটা বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য বিব্রতকর। এটা একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল, সেজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটাও সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে এগিয়ে যাবে। আইনে তার যা সুবিধা... তাকে শোকজ করা হবে। তিনি কেন বলেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেটা আইনিভাবে যে প্রক্রিয়া দেওয়া আছে, সেটা তার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। প্রধান বিচারপতি এ শোকজ পাঠাবেন। এ শোকজ যখন আমাদের কাছে পাঠানো হবে। এটা আমরা তার কাছে পৌঁছে দেব।  

সেই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার সুপ্রিম কোর্টের চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, না, আমি এখনও চিঠি পাইনি। আমি সকাল বেলা শুনলাম প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি বিজ্ঞ বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। আপনারা লেখেন বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়ার কথাটার মানে হচ্ছে জোর করে কেড়ে নেওয়া। এটা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। এ রকম যদি ঘটনা ঘটে প্রধান বিচারপতির এ ক্ষমতা আছে তাকে বিচারিক ক্ষমতা থেকে কিছুদিন সরিয়ে রাখা।

তিনি আরও বলেন, বিচারিক কাজ থেকে তাকে যে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে, সেটাও প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলে আমরা একটা জিও করব। প্রধান বিচারপতিকে আমি কিছু বলিনি। এটি (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) ওনার (প্রধান বিচারপতি) সিদ্ধান্ত। উনি স্বপ্রণোদিত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আনিসুল হক বলেন, এখন কথা হচ্ছে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? বিজ্ঞ বিচারকরা প্রতিদিনই কিন্তু রায় দেন। রায় কেউ সন্তুষ্ট হয়, কেউ অসন্তুষ্ট হয়। যারা অসন্তুষ্ট হন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সংবিধান অনুযায়ী তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে আপিল বিভাগ। সেই আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতাও আছে। সেগুলো তারা প্রয়োগ করে। রায় দিলেই যে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নয়। তারা মেরিটের ওপরে, আইনের ওপরে, রায় দেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।

আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেওয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর কেউ যদি কোনো ধর্ষণ মামলা করতে আসে, তাহলে সেই মামলাটা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা।  

তিনি আরও বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে কোনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা করার ব্যাপারে তামাদি বারিত হয় না (নট বার বাই লিমিটেশন)। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর কিন্তু মামলা হয়নি। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এ মামলার প্রথম এফআইআর হয়। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, একমাত্র আইন দিয়ে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে বা পক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকের বক্তব্যটি সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি। এ দুটোই তিনি ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করেছেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, এ ভায়োলেশনের তাৎপর্যটা কী? অনেক রায় আছে বেআইনি হয়, আপিল বিভাগে গিয়ে স্যাটেসাইড হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইম্প্লিকেশন আছে, একটা কনসিকোয়েন্স আছে। এ কারণেই আজকে বিচার বিভাগের যিনি গার্ডিয়ান, যিনি প্রধান তাকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঠিক সেই কারণেই আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকে গত শনিবার বলেছিলাম, আমি প্রধান বিচারপতির কাছেই বিচার চাইতে পারি। কারণ বিচার বিভাগ স্বাধীন।

বিচারকের পর্যবেক্ষণের কারণে কোনো ভুল ম্যাসেজ যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার বা নির্বাহী বিভাগ যদি বিচারকের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার না করতো, বিচার বিভাগ যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে রং ম্যাসেজ হতো, কিন্তু এ পদক্ষেপ নেওয়ার পর আমার মনে হয় না রং ম্যাসেজ যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে।

বিচারকের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আমি বিজ্ঞ বিচারকদের সঙ্গে কথা বলি না। ওনার ডিফেন্স উনি নেবেন। সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১, আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা
জিসিজি/আরবি