সিলেট: বিয়ের পর পরকীয়ার প্রমাণ না রাখতে প্রেমিক ইমরান আহমদকে অপহরণ করে হত্যা করে মরদেহ শ্বশুড়বাড়ির পুকুরে গুম করেছিলেন গৃহবধূ সুহাদা বেগম।
আলোচিত এই হত্যা মামলায় সুহাদা বেগম (২১) ও ভাড়াটে খুনি জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১ম আদালতের বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের ওমর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আহমদ (২৩) ও দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়া গ্রামের বদরুল ইসলামের স্ত্রী সুহাদা বেগম (২১)।
আর হত্যা সম্পৃক্ততার অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাস প্রাপ্তরা হলেন, দুর্গাপুরের মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে মাছুম আহমদ (৩০) ও মুলাগুল নয়াখেল গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৪)।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, কানাইঘাটের সোনাপুর গ্রামের আবু বকরের ছেলে ইমরান হোসেন স্থানীয় রমিজা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে টেইলার্সের ব্যবসা ছিল। তার দোকানের পাশে সুহাদা বেগম মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। নব বিবাহিত সুহাদা বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকায় ইমরানের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন সুহাদা। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে সুহাদা ইমরানকে খবর দিয়ে নেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল ইমরান। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবু বকর প্রথমে থানায় জিডি ও পরে অপহরণ মামলা করেন।
রায় ঘোষণার পর মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার সাবেক উপ পরিদর্শক (এসআই) জুনেদ আহমদ বলেন, নিহতের বাবা সুহাদাসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭৮ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়েরের কয়েকদিন পরে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং আদালতে জবানবন্দি মোতাবেক সুহাদার দেখানো মতে, তার শ্বশুড় বাড়ির পুকুরের তলদেশে গাছের সঙ্গে বস্তায় ভরে ইট দিয়ে বেধে রাখা অবস্থায় ইমরানের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হত্যার বর্ণনা দিয়ে গিয়ে সুহাদা জানিয়েছিল, ইমরানকে পানির সঙ্গে নেশা ও ঘুমের বড়ি খাইয়ে অচেতন করেন। এরপর সে অন্য কক্ষে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বসে আর ভাড়াটে ৪ খুনিরা ঘরে ঢোকে অচেতন ইমরানকে গলা কেটে হত্যা করে বাড়ির পুকুরে মরদেহ গুম করে রেখেছিল।
এই ঘটনায় নিহতের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলা তদন্তক্রমে ৪ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি আদালতে দায়রা ২২৬২০১৮ মূলে বিচারকার্যের জন্য রেকর্ডভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিচারকার্য শুরু হয়। মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সুহাদা বেগম ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট অনির্বাণ দাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
এনইউ/এসআইএস