ঢাকা: রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ চার জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকার শান্তিবাগের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা ৪৯টি মামলার বৈধতা নিয়ে রিট মামলার বাদী আকরামুল আহসান কাঞ্চন এ আবেদন করেন।
তার রিটের বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ চার জনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) আকরামুলের আইনজীবী এমাদুল হক বশির জানান,সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে নাম আসায় তিনিসহ চার জনকে বিবাদী করতে আবেদন করি। মঙ্গলবার সে আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আর শুনানির জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এখন এই চারজনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছি। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
পীর ছাড়া অন্য তিন জন হলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোলম কবিরের ছেলে সাকেরুল কবির, একই জেলার সুধারামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ফারুকুর রহমান এবং কুমিল্লার হোমনার লিয়াকত হোসেন প্রধানের ছেলে মফিজুল ইসলাম।
আইনজীবী এমাদুল হক বশির বলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি ১ হাজার ৪৬৫ দিন জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলাতে খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাখিল করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই ৪৯টি মামলার বৃত্তান্ত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এরপর সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনও না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজারবাগের দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরীফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করে আসছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।
এদিকে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে রাজারবাগের পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ ভুক্তভোগী গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে এ রিট আবদেন করেন। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ক্রমাগত ফৌজদারি মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা নির্ণয় করে সম্পদের উৎস সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পীর ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় উলামা আঞ্জুমান বাইয়িন্যাত অথবা ভিন্ন কোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কিনা সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসব বিষয়ে একইসঙ্গে ৫ ডিসেম্বর শুনানি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২,২০২১
ইএস/এনএইচআর