ঢাকা: শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির হারুন অর রশীদের দণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ হওয়ায় তার সংসদ সদস্য (এমপি) পদ থাকবে না বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিমের বেঞ্চে দেওয়া ওই রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপিল খারিজ হয়েছে। বিচারিক আদালতের সাজা বহাল। তবে যতদিন জেল খেটেছেন (প্রায় ১৬ মাস) সেটাকে দণ্ড হিসেবে গণ্য করে সার্ভ আউট করে দিয়েছেন। মানে হচ্ছে ওনাকে আর জেলে যেতে হবে না।
খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, এখানে একটি সাংবিধানিক প্রশ্ন চলে আসে। ওনার সদস্য পদ থাকে কিনা। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।
তিনি বলেন, আজকে হাইকোর্ট যে রায় দিলেন সেখানে বিচারিক আদালতের রায়টা বহাল হয়ে গেল। তার মানে তার সাজা বহাল। কিন্তু তিনি যে সময়টা কাস্টডিতে ছিলেন সেটা সার্ভ আউট হলো। তার মানে হলো, আপিলের রায় শুনে আমি মনে করি, ওনার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।
আদালতে এমপি হারুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মিজানুর রহমান ও এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, হারুন অর রশীদের সাজা মডিফাই করে তাকে সার্ভ আউট অর্থাৎ এ মামলায় তিনি প্রায় ১৬ মাস জেলে ছিলেন, এই ১৬ মাস সাজা বহাল রাখা হয়েছে। সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা বিক্ষুব্ধ। তিনি নির্দোষ। তিনি গাড়ি বিক্রি করেননি। কোনো অপরাধ করেননি। তাই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবো।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দুদকের মামলায় তাকে ৫ বছরের দণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ মামলায় চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার অপর আসামি ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পরে আসামিদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন। পাশাপাশি তাদের জামিন দেন উচ্চ আদালত।
মামলার অভিযোগ অনুসারে, বিএনপি জোট সরকারের সময় এমপি থাকাকালে ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনেন। গাড়িটি তিনি পরে ইশতিয়াক সাদেকের কাছে ৯৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর সাদেক গাড়িটি চ্যানেল নাইনের এমডি বাপ্পীর কাছে বিক্রি করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত গাড়ি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু এমপি হারুন শুল্ক না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এই অভিযোগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এমপি হারুনসহ তিনজনের নামে এ মামলা দায়ের করেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক ইউনুস আলী।
এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। একই বছর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
হারুন অর রশীদ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: এমপি হারুনকে আর কারাভোগ করতে হবে না
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
ইএস/এমজেএফ