ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বদলি সাজা: ৪ জনের নামে মামলা দায়েরের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
বদলি সাজা: ৪ জনের নামে মামলা দায়েরের নির্দেশ গ্রেফতার আসল সোহাগ

ঢাকা: মাসে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির হয়ে অন্য একজন কারাভোগের ঘটনায় যুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পেশকার মিজানুর রহমান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।

মামলার আবেদনে ঘটনায় জড়িত মোট চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানানো হয়। আবেদনের শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরী তা কোতোয়ালী থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন।

যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- আসল সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, নকল সোহাগ ওরফে হোসেন, এ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজী ও ইব্রাহীম হোসেন। এছাড়াও অজ্ঞাতানামা কয়েকজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সিএমএম আদালতে সংশ্লিষ্ট পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নকল সোহাগকে কারাগার থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক জেয়াসমিন আক্তারের আদালতে নিয়ে আসা হয়।  

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাদের পাটোয়ারী দুই সোহাগকে আদালতে উপস্থাপন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, চার বছর ধরে সোহাগের বদলে টিটু হত্যা মামলায় যে কারাদণ্ড ভোগ করছেন, তিনি আসলে হত্যাকারী সোহাগ নন। তার নাম হচ্ছে হোসেন। তিনি আসল সোহাগের সঙ্গে যোগসাজশে পরিচয় গোপন করে চার বছর ধরে হত্যার মিথ্যা দায় নিয়ে কারাদণ্ড ভোগ করে আসছেন। তাই তাকে এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে আসল অপরাধীকে আড়াল করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও আবেদন করছি।

এ সময় ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর জন্য বেঞ্চ সহকারীকে (পেশকার) নির্দেশ দেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৯ জানুয়ারি আসল সোহাগকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান এ তথ্য জানান।  

র‌্যাব জানায়, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কদমতলী থানাধীন নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটুকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

এ ঘটনায় বড় সোহাগ, মামুন, ছোট সোহাগসহ আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় এক নম্বর আসামি বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার হয়। ২০১৪ সালের ১৬ মে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পলাতক ছিলেন বড় সোহাগ। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

রায় প্রকাশের পর বড় সোহাগের পরিকল্পনা মোতাবেক তার ফুফাতো ভাই মো. হোসেন বড় সোহাগ পরিচয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন চাইলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলহাজতে যান নকল সোহাগ। নকল সোহাগকে ২-৩ মাসের মধ্যে কারাগার থেকে বের করে আনার আশ্বাস দেয় আসল সোহাগ। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজনের জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান।  

প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করা আসামি সোহাগ এবং বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম আসল সোহাগকে ধরার চেষ্টা করছিল। এরইমধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ তথ্য জানতে পেরে আসল সোহাগ দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তনের পর পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করেন তিনি। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে আসেন বড় সোহাগ। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  

বড় সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
কেআই/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।