ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

গণধর্ষণের আসামিকে বাঁচাতে আদালতে ‘কর্মী পরিচয়ে আ.লীগের প্রত্যয়ন’!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
গণধর্ষণের আসামিকে বাঁচাতে আদালতে ‘কর্মী পরিচয়ে আ.লীগের প্রত্যয়ন’! প্রত্যয়নপত্র

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার এক আসামিকে বাঁচাতে আদালতে আওয়ামী লীগের ‘কর্মী’ পরিচয়ে প্রত্যয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ২ নম্বর কুষ্টিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি এ ইউনিয়নের রূপাখালী গ্রামের। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মহলে।  

আসামির পক্ষ আদালতে আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ও ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম খোকা।

ভুক্তভোগীর বাবা মামলার বাদী বলেন, ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে আমার কিশোরী মেয়েকে গণধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় পাঁচ যুবক। কিন্তু আমার মেয়ে ভিডিও প্রকাশের ভয়ে বিষয়টি প্রথমে গোপন রাখে। কিছুদিন পর আসামিরা গণধর্ষণের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেন। এতে ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে গেলে ওই বছরের ৩ মার্চ এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত রিপন, লিয়ন ওরফে লাবিব, আশিক, খোকন ও ছমিনকে গ্রেফতার করে। পরে ওই দিনই কোতোয়ালি মডেল থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে বাদী হয়ে আমি মামলা করি। ওই মামলায় চার আসামি প্রায় পাঁচ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেলেও আসামি রিপন এখন জেলে আছেন।  

এদিকে মামলা থেকে বাঁচাতে ঘটনার মূলহোতা আসামি লিয়ন ওরফে লাবিব আকন্দকে ২ নং কুষ্টিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ‘কর্মী পরিচয়ে’ আদালতে একটি প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।    

ওই প্রত্যয়নপত্রে ২ নং কুষ্টিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম শামসুল হক কালু ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল সরকারের স্বাক্ষর রয়েছে।  

জানতে চাইলে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামসুল হক কালু।  

তিনি বলেন, ওই ছেলের বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি একটি প্রত্যয়নপত্র চেয়েছিলেন, তাই দিয়েছি। কিন্তু মামলার ঘটনাটি তখন আমি জানতাম না।    

বাদীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল মামলা থেকে বাঁচাতে আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে বয়স কম লিখে তাদের কিশোর বানিয়ে আদালতে দাখিল করেছে।  

পরে ওই প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে আসামি খোকন ও রিপনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।  

আর ঘটনার মূলহোতা আসামি লিয়ন ওরফে লাবিব আকন্দ, আশিক আকন্দ ও ছমিনের দণ্ড লঘু করার উদ্দেশে তাদের কিশোর দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্রের বদলে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. ফারুক হোসেন বলেন, তদন্ত করে বয়স কম পাওয়ায় আসামি লিয়ন ওরফে লাবিব আকন্দ, আশিক আকন্দ ও ছমিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে বাদীর যদি ওই আসামিদের বয়স নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে তিনি আদালতে আবেদন করতে পারেন। তখন আদালতের নির্দেশ পেলে পুনরায় আসামিদের বয়স যাচাই করার সুযোগ রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।