ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

লক্ষ্মীপুরে মাদরাসা ছাত্রী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
লক্ষ্মীপুরে মাদরাসা ছাত্রী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে রোজিনা আক্তার (১৫) নামে এক মাদরাসা ছাত্রীকে হত্যার ঘটনায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

বুধবার (১৮ মে) সকাল ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

 

ভিকটিম কিশোরী পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিধবা মনেয়ারা বেগমের পালক মেয়ে।  

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে আমির হেসেন আল আমিন ওরফে কয়লা (২৬), একই এলাকার পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে মো. হুমায়ূন কবির (৩৪), আবদুল মতিনের মেয়ে আঁখি আক্তার রুমা (২৫) ও বামনী গ্রামের মৃত মোস্তফার ছেলে মো. বাহার ওরফে জামাই বাহার (৩১)।

জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

আদালত ও মামলা সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রোজিনা রায়পুর উপজেলার দেনায়েতপুর গ্রামের খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর দুপুরে সে বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে মাদরাসার উদ্দেশে বের হয়। ওই দিন সে আর বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১২ ডিসেম্বর ওই এলাকার ফারুকীয়া মাদরাসার পাশের একটি পরিত্যক্ত বাউন্ডারি ঘেরা বাগানে রেজিনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই দিন রোজিনার পালক মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নয় মাস বয়সী রেজিনাকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করতেন মনেয়ারা।  

এরপর পুলিশ তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আঁখি আক্তার রুমা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করলে তিনি আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি অনুসারে ঘটনার মূল হোতা আমির হোসেন আল আমিন ওরফে কয়লাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জুন রায়পুর থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।  

এতে উল্লেখ করা হয়, মামলার প্রধান আসামি আমির হোসেন কিশোরী রোজিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মেয়েটি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকেলে তাকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন আমির। আমিরকে এতে সহায়তা করেন আঁখিসহ তিনজন। ওই সময় রোজিনা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিয়ে করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে না পারায় আরেকটি নির্জন বাগানে নিয়ে মেয়েটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করার পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে একটি গাছের ডালের সঙ্গে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। হত্যার সময় অন্য আসামিরা আমির হোসেনকে সহায়তা করেন। ভিকটিমের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকারগুলো নিয়ে যান আসারিরা।  

দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বুধবার চার আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রায়ের সময় আদালতে চার আসামির মধ্যে আমির হেসেন কয়লা এবং আঁখি আক্তার রুমা উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক।  

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিক উল্যা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়ে বলেন, মামলায় যেসব সাক্ষ্য, প্রমাণ ও আলামতের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়েছে, তাতে আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি।  

অন্য দিকে এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আঁখির নামে আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০২১ সালে ২ সেপ্টেম্বর মাত্র তিন আনা সোনার এক জোড়া কানের দুলের লোভে রায়পুরের বামনী ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের পপি সাহা নামে সাত বছরের একটি শিশুকে গলা টিপে হত্যা করেন আঁখি। টের পেয়ে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। তার নামে ওই মামলা চলমান রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।