ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী কানাডা প্রবাসী ইফতেখার আবেদীনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে চার্জশিটে ইফতেখারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আমিন ও শ্বাশুরি শিরিন আমিনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
আদালত সূ্ত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কাজী শরীফুল ইসলাম এই চার্জশিট দাখিল করেন। যা গত ২০ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়।
ওইদিন ইফতেখার ও তার বাবা-মা আত্মসমর্পণ করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। বাবা-মায়ের জামিন বহাল রাখলেও ইফতেখারের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
তবে বাবা-মাকে বাদ দিয়ে শুধু ইফতেখারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করায় অসন্তুষ্ট বাদীপক্ষ। শ্বশুর বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে এলমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। তাই গত ২০ জুন শুনানির দিনে চার্জশিটের ডিবির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়ার কথা জানিয়ে সময় চান এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। নারাজি দাখিলের জন্য আগামী ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ডিবির দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে গ্রাজুয়েশনের জন্য মালয়েশিয়ার অলিম্পিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ইফতেখার। পড়াশোনা শেষে ২০০৪ সালে ম্যারিসুজানা নামে ফ্রান্সের এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম ও পরের বছর বিয়ে হয়। ওই সংসারে ২০১০ সালে তাদের এক মেয়ে হয়। পরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
এদিকে গত বছর টিন্ডার অ্যাপসের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার সঙ্গে ইফতেখারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন মাস পর ইফতেখার ফ্রান্সে ও পরে কানাডায় যান।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, বিয়ের আগে ও পরে এলমার সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে আসামি বুঝতে পারেন। নিজের সঙ্গেও অন্য মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক বিষয়ে তিনি নিজেই ভিকটিমকে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ হয়। পরবর্তীতে তারা দুজনই অতীত ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর ইফতেখার এলমাকে কানাডায় নিয়ে পড়াশোনা করানোর চিন্তা করেন। বিদেশে নেওয়ার ব্যয় মেটাতে গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে কয়েক কিস্তিতে ইফতেখার এলমাকে সাত লাখ টাকা দেন, যা বনানী থানাধীন ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলমার একাডেমিক ফলাফল সংগ্রহ করতে গিয়ে ইফতেখার দেখেন তিনি এক বিষয়ে অকৃতকার্য। এজন্য জরিমানাসহ অন্যান্য খাত হিসেবে ২৪ হাজার টাকা ইফতেখার এলমাকে দেন এবং তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে ভিকটিমের শারীরিক সমস্যার কারণে গাইনী বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরীক্ষায় এলমার গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। এসব কারণে এলমা ব্যক্তি জীবনে হতাশার মধ্যে ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার আগের দিন ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ইফতেখারের সঙ্গে এলমার ঝগড়া হয়। এলমা তার স্বামী ইফতেখারকে কানাডা যেতে মানা করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বেলা ২টার দিকে আসামি পাশের রুমে গিয়ে ধুমপান করে। পরে আসামি পাশের রুম থেকে তার রুমে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পান। তখন বাড়ির অন্যদের সহযোগিতায় দরজা ভাঙেন ইফতেখার। দরজা ভেঙে দেখেন এলমা ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর এলমাকে সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
কেআই/এসএ