ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র: রুল শুনানি সোমবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র: রুল শুনানি সোমবার

ঢাকা: পদ্মাসেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানির জন্য সোমবার কার্যতালিকায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষে রোববার (২৬ জুন) বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল টি শুনানির জন্য উপস্থাপনের পর এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

দৈনিক ইনকিলাবে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের বিচার দাবি: আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো একাট্টা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরদিন ওই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের কথা উল্লেখ করে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ (৩ ধারা)’ অনুসারে কমিশন গঠন এবং দোষীদের কেন বিচারের আওতায় আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন হাইকোর্ট।  

চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও যোগাযোগ সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং আইজিপিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি এ কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরে ওই বছরের ২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ০৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন হাইকোর্ট।  

পরবর্তীতে কয়েকদফা সময়ের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।  

এর মধ্যে কমিশন গঠনের জন্য ২০১৭ সালের ০৯ নভেম্বর  একজন সদস্যের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তিনি হলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) মো. কামরুজ্জামান।

পরবর্তীতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হওয়ার রুলটি আর শুনানিতে উঠেনি।

ইনকিলাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাঁপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারকে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার কারণ পর্দার আড়ালে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করে সরকার। কানাডার আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর সবর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। তারা এখন মনে করছেন ওই সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করায় ড. ইউনূসকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল ঘোষণা দিয়েছেন সিদ্ধান্ত হলে তিনি এবং মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যৌথভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী হবেন। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সংসদে থাকা দলগুলো কার্যত একত্রিত হয়েছে।

কানাডার একটি আদালত পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলা খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেওয়ার পর আলোচিত এ ইস্যুতে সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটি জাতীয় সংসদে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ড. ইউনূস ও জার্মানির অর্থে পরিচালিত দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি দেশের যারা পদ্মসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সবাইকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে ক্ষতিপূরণ বিশ্বব্যাংককে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও দাবি জানানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবি করে বলেছেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ‘গালগপ্পের’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে ইন্ধন যুগিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস। এ জন্য ড. ইউনূসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তাই নয় এ ইস্যুতে সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
ইএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।