ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

১২ কোটি ফি: সেই আইনজীবীর অ্যাকাউন্ট জব্দ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
১২ কোটি ফি: সেই আইনজীবীর অ্যাকাউন্ট জব্দ

ঢাকা: কর্মীদের পাওনা নিয়ে সমঝোতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো কয়েকদিন আগে।

রোববার সেই আইনজীবী ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, তার সব অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

কোম্পানির মুনাফার অংশ ৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ ২০০৬ সাল থেকে তা শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা।  কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তারা। আর গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি  হাইকোর্টে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।

গত ২৩ মে আদালতের বাইরে উভয়পক্ষের সমঝোতা হয়েছে উল্লেখ করে রিটকারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী জানান, সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা দাবি নিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে। মালিকপক্ষ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, আইন অনুযায়ী যত পাওনা তা পরিশোধ করা হবে। এ কারণে আবেদনকারীরা বলেছেন যে, তারা মামলাটি আর চালাতে চান না, তাই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন)এ আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, ১৭৬ জন কর্মীর মধ্যে আট জন বাদে বাকি ১৬৮ জন তাদের টাকা বুঝে পেয়েছেন। আটজনের মধ্যে চারজন মারা গেছেন, তাদের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অন্য চারজন বিদেশে আছেন, তাদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জটিলতাও আছে।

তিনি আরও জানান, মোট ৪৩৭ কোটি টাকা। গ্রামীণ টেলিকম একটি সেটেলম্যান্ট একাউন্ট করেছিল, যেটির সিগনেটরি হলেন কোম্পানির এমডি এবং ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ওই অ্যাকাউন্টে পুরো ৪৩৭ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পাওনাদার ব্যক্তিকে তাদের পাওয়া হিসেবে করে পরিশোধ করা হয়েছে।

আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, আদালত জানতে চেয়েছেন- ঠিক মত লেনদেন হয়েছে কিনা, সব শ্রমিক ঠিক মত টাকা পয়সা পেয়েছে কি না, এই বিষয়টি কোর্টকে এফিডেভিট আকারে দুই পক্ষকে যৌথভাবে জানাতে বলেছে। আমরা আগামী ২ আগস্ট জানাবো।

৩০ জুন  বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, আমরা শুনেছি, টাকার বিনিময়ে কর্মচারীদের আইনজীবী পক্ষপাতিত্ব করেছেন এবং শ্রমিক-কর্মচারীরা সমঝোতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছেন।

আদালত আরো বলেন, আদালত ব্যবহার করে কোনো অনিয়ম করা চলবে না। সব কিছু আইন অনুযায়ী না হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আমি আদালতের মর্যাদা এবং আইনজীবীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যিনি একটি মামলার জন্য ১২ কোটি টাকা ফি নিতে পারেন।

একইদিন এ বিষয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, একটি অখ্যাত নিউজ পোর্টাল খবর ছেপেছে যে এ বাবদ ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। আসলে এটি একটি গুজব। এ প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই।

রোববার সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নিয়ে আষাঢ়ে গল্প বানানো হয়েছে। গল্প বানানোরতো একটা যুক্তি থাকে। মানুষ কি মামলায় হারার জন্য ঘুষ দেয় নাকি। প্রফেসর ইউনূস তো আমার সাথে মামলায় হেরেছেন। তিনি বাধ্য হয়ে ৪৩৭ কোটি টাকা দিয়েছেন।

১২ কোটি টাকার বিষয়টি সত্য নয়। আমার ফিস পরিশোধ করা হয়েছে অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে। শ্রমিক ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে আমার অ্যাকাউন্টে। এটা চাইলে বের করা যাবে।

কত টাকা ফিস নিয়েছেন এমন প্রশ্নে আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, আমি কত পেয়েছি সেটা বলতে চাই না। এটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার কমার্শিয়াল চুক্তি। আমার মক্কেল যেটা দিয়েছেন সেটাই আমি পেয়েছি।

অ্যাকউন্ট জব্দের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সকালে গিয়ে দেখেছি, আমার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত তিনটি অ্যাকাউন্ট, আর আমার পার্টনারের দুইটা আর আমার চেম্বারের একটা অ্যাকাউন্ট। সবগুলো একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রফেসর ইউনূসের সুদ বাণিজ্য উন্মেচনের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক গত ৪/৫ বছর কাজ করে যাচ্ছে। অথচ তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসত্য বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২২
ইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।