ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সেই শিশুকে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
সেই শিশুকে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ 

ঢাকা: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির জন্য ১৫ দিনের মধ্যে আপাতত পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ওই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।  

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।  

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক ও মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।  

গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে সোমবার আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।  

পরে আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, ১৫ দিনের ওই নবজাতকের আইনগত অভিভাবকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দিতে সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজ কল্যাণ সচিব ওই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন। ওই কমিটি শিশুটির কল্যাণে কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতকে জানাবে।  

রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।  

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযানে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হবেন।  

৫৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ধারা ৫২ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অনুকূলে বা, ক্ষেত্রমত, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হবে।  

(২) কর্তৃপক্ষ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হারে ও পদ্ধতিতে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে মোটরযানের শ্রেণি বিন্যাস বিবেচনাক্রমে প্রত্যেক মোটরযানের বিপরীতে আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা (contribution) আদায় করবে।  

(৩) মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা (২) এর অধীন আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা (contribution) দিতে বাধ্য থাকবে।  

৫৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ৫৩ তে উল্লিখিত আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার উদ্দেশ্যে সরকার একজন চেয়ারম্যানসহ নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করবে।  

শিশুটির স্বজনরা জানান, শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।  

পরিকল্পনামতো ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।  

তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

এদিকে শনিবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক চিকিৎসাধীন ওই শিশুকে দেখতে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ধরনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির চিকিৎসা খরচসহ ভবিষ্যতের জন্য তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিহত তিনজনের স্বজনরা আরও জানান, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগমের আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলো- ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও।  

এ ঘটনায় শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে ত্রিশালের রায়মনি গ্রামসহ পুরো উপজেলার বাসিন্দারা।

পরে উপজেলার রায়মনি গ্রামে নিজ বসত ঘরের পেছনে পাশাপাশি তিন কবরে দাফন করা হয় জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।