ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মেহেরপুরে কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৪ আসামির যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
মেহেরপুরে কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৪ আসামির যাবজ্জীবন

মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী থানার পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের কনেস্টেবল আলাউদ্দীন হত্যা মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া একই ঘটনায় দায়ের করা মাদক মামলায় তাদের চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বেলা পৌনে ১২টায় মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় দেন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বলিয়াদাপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সোহেল (৪৫), মৃত জামাত আলীর ছেলে রুবেল (২৮), সোন উল্লাহর ছেলে শাকিল হোসেন (২৮) ও কালু মণ্ডলের ছেলে আনিছ (৩৫)।

এসময় দুই আসামিকে বেকসুর খালাসও দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আজাহার আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের তালতলা মোড় নামক স্থানে পিরতলা পুলিশ ফাঁড়ির সেই সময়ের ইনচার্জ এএসআই সুবীর রায় সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদক বিরোধী অভিযান চালান। এসময় কাজিপুর থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাস আসতে দেখে পুলিশের ওই দলটি গাছের গুঁড়ি রাস্তায় ফেলে মাইক্রোবাসটির গতিরোধ করে। এসময় পুলিশ সদস্যরা নিজেদের গায়ে টর্চের আলো ফেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসের চালককে নেমে আসতে বলেন। পরে মাইক্রোবাসটি পেছন গিয়ারে গিয়ে দ্রুত চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় কনস্টেবল আলাউদ্দীন তার রাইফেলের বাট দিয়ে চালকের সামনের গ্লাস ভেঙে দেন। একপর্যায়ে  মাইক্রোবাসটি থামিয়ে চালক ও গাড়িতে থাকা লোকজন কনস্টেবল আলাউদ্দীনকে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসের বাম্পারের সঙ্গে বাঁধিয়ে টেনে ছেঁচড়িয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হাড়াভাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসার সামনে নিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় আলাউদ্দীনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর রাত ৯টার সময় মারা যান তিনি।

পরের দিন ২৫ জুলাই সকালের দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া থেকে ওই মাইক্রোবাসটি (যার নং কুষ্টিয়া-চ-০২-০০১১) মামলার প্রধান আসামি আনিছের বাড়ির পাশে একটি বাঁশ বাগান থেকে জব্দ করা হয়। এসময় মাইক্রোবাসের সিটের নিচ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আনিছকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় পরের দিন ২৫ জুলাই পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালীন আইসি সুবীর রায় বাদী হয়ে এ ঘটনায় ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ২৫বি(১)বি তৎসহ পেনাল কোডের ৩৩৩/৩৫৩/৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার হত্যা মামলা নং ১৯, তারিখ ২৫/০৭/২০১৫ ইং।

মামলাটি তদন্তের পর গাংনী থানার সেই সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা মুক্তার আলী ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছয়জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।

হত্যা মামলায় ১৬ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দেন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের মামলায় মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দেন।  

সরকার পক্ষের কৌসুলি অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট কাজী শহিদুল হক বলেন, মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও সাক্ষ্যে দোষী প্রমাণ হওয়ায় চারজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় বাকি দু’জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে আমরা খুশি।  

মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মারুফ আহম্মেদ বিজন ও অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান আব্দুল মতিন।

অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যথেষ্ট ত্রুটি রেখে চার্জশিট দিয়েছেন। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।