ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩০২ ধারা যুক্ত না করে চার্জশিট, ওসি-তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে তলব 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২২
৩০২ ধারা যুক্ত না করে চার্জশিট, ওসি-তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে তলব 

নাটোর: নাটোরের সিংড়ায় জখমে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যুক্ত না করে কেবলমাত্র মারপিটের ধারা উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছিল পুলিশ।

এ ঘটনায় সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে লিখিত কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

একই সঙ্গে ওই মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে পিবিআই নাটোরের পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার সময় সিংড়ার আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট মো. আবু সাঈদ এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে সিংড়া এলাকায় একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের আঘাতে আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তি আহত হন। এ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আব্দুল খালেকের ছেলে মো. রিপন আলী বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু সিংড়া থানর ওসি মামলাটি গ্রহণ করেননি।  

পরে ৮ জুন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বাবা আব্দুল খালেক মারা গেলে ওসি তড়িঘড়ি করে সাধারণ জখমের অভিযোগে মামলাটি রেকর্ড করেন। একই সঙ্গে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়। সে সময় ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক-তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।  

পরে ১১ আগস্ট নিহতের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বাদী হয়ে মারধরে তার স্বামী আব্দুল খালেকের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে তড়িঘড়ি করে সাধারণ মারপিট ও হত্যাচেষ্টার ধারা উল্লেখ আদালতে অভিযোগপত্র দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।  

পরে বিষয়টি বাদী নিজেই সিংড়া আমলি আদালতের নজরে আনেন। পাশাপাশি ওই মামলায় ৩০২ ধারা সংযোজন করে নতুন করে মামলা চালু করার জন্য দরখাস্ত করেন মামলার বাদী।  

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এ মামলার শুনানির দিন ধার্য্য ছিল। দুপুরের দিকে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।  

আদেশে কেন দেরি করে মামলা রেকর্ড করা হলো, এর কারণ ব্যাখা করার জন্য সিংড়া থানার ওসি নুর ই আলম সিদ্দিকী এবং জখম জনিত কারণে মৃত্যু হলেও কেন ৩০২ ধারা সংযোজন না করে দায়সারাভাবে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তার ব্যাখা দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।  

আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সশরীরে তাদের আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে হবে। পাশাপাশি বিচারক ওই মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।  


এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জখমে মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরও পুলিশ ৩০২ ধারা সংযোজন না করে ন্যায়বিচার থেকে বাদীকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আলী আজগর বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করে নিয়েছিল। আব্দুল খালেক প্রথমে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।  

পরে অবস্থার অবনতি হলে তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানার তত্ত্বাবধানে নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত হয়। তবে সেখানে জখম জনিত কারণে মৃত্যুর প্রমাণ মেলেনি। তাই তদন্ত কর্মকর্তা সাধারণ জখমের ধারায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর ইআলম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখনও আদালত থেকে কোনো কাগজপত্র পাননি। তাই বিষয়টি না জেনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।  

একই কথা জানালেন অপর পুলিশ তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামও।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।