ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘হাজিরা দিতে এসে জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন মেহেদী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
‘হাজিরা দিতে এসে জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন মেহেদী’

ঢাকা: চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে পুলিশকে মারধর ও চোখে পিপার স্প্রে করে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলো। ব্লগার নাজিম উদ্দিন হত্যা মামলায় জামিনে থাকা এ আসামি আদালতে হাজিরা দিতে এসে কারাগারে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

 

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) মেহেদীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলার রিমান্ড আবেদনে এ কথা বলা হয়। এদিন দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন শুনানি শেষে তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।  

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।  

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মেহেদী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর শীর্ষ নেতা বরখাস্তকৃত মেজর জিয়ার সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সংগঠনের আসকরি শাখার সদস্যদের রিক্রুট করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিনতাইকৃত পলাতক জঙ্গি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন, যার সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার। মেহেদী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো। সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করে। এ পরিকল্পনার কথা মেহেদীকে জানায়। সে আদালতে মামলাসমূহের নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার সময় অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের সে এ পরিকল্পনার কথা জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ নভেম্বর পরিকল্পনা মোতাবেক ঢাকা সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গনে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাফি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ছিনতাইকৃত আসামিসহ পলাতক আসামিদের অবস্থান নির্ণয়, নাম-ঠিকানা সংগ্রহ, গ্রেফতার এবং তাদের সংগঠনের অফিসের ঠিকানা, দলীয় নেতাদের পদ-পদবী, সদস্য সংখ্যা, ঘটনার নির্দেশদাতা, তাদের সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কিংবা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য উদঘাটনের জন্য রাফির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে রিমান্ড শুনানির জন্য মেহেদীকে ডান্ডাবেড়ি, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পড়িয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়৷ 

শুনানিকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি মেহেদী। তিনি বলেন, যে মামলার আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আমি সেই মামলায় জামিনে ছিলাম। আমি হাজিরা দিয়ে বের হয়ে যাই। এরপর আদালত এলাকায় প্রায় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ছিলাম। আমি ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না৷ আমার বক্তব্য দেওয়ার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে চাই।  

শুনানি শেষে আদালত আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে আজ সন্ধ্যায় রিমান্ডে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো আইনজীবী নিযুক্ত হতে চাইলে গ্রহণ করার কথা বলেন বিচারক৷ 

বুধবার (২৪ নভম্বর) মেহেদীককে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট সূত্র জানায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান। তিনি আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার সদস্য। তার বাড়ি সিলেটে। তিনি আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।  

এ ঘটনায় রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ। রাতেই ১০ জঙ্গির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালত প্রাঙ্গন থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার অনুমতিতে এই ছিনতাই অপারেশন পরিচালনা করেন সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
কেআই/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।