দুনিয়াজোড়া মানুষ নানান প্রাণী পুষে, প্রশ্ন জাগতে পারে ঠিক কত আগে থেকে মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের এই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে?
গবেষকরা বলছেন, মোটামুটি ১৮ হাজার ৮০০ বছর থেকে ৩২ হাজার ১০০ বছর থেকে আগে প্রথম ঘরে কুকুর পালন শুরু হয়। শুরুতে মনে করা হতো বাড়িতে কুকুর থাকলে শিকারে সহায়তা পাওয়া যাবে, নিরাপত্তা থাকবে এবং বিপদে আগে থেকেই সংকেত পাওয়া যাবে।
তবে বর্তমানে শখ বা অবসরের বন্ধু হিসেবেই আমরা বিভিন্ন প্রাণী পুষতে ভালোবাসি। তাছাড়াও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পোষা প্রাণী মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
গত বছরের শেষের দিকে গবেষণা জার্নাল রিসার্চগেটে 'ডিপ্রেশন এমোং পেট ওনার্স অ্যান্ড নন-পেট ওনার্স: আ কম্প্রেহেনসিভ ক্রস-সিলেকশনাল স্টাডি ইন ঢাকা বাংলাদেশ' শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ঢাকায় বসবাসরত পোষাপ্রাণীর মালিকরা পোষাপ্রাণী নেই এমন নাগরিকদের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম বিষণ্নতায় ভোগেন। ১৩ বছরের বেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছিল।
গবেষকরা রাজধানীর ২৮০ জন বাসিন্দার ওপর এই জরিপ করেছিলেন। এর মধ্যে ১৪০ জন ছিলেন পোষা প্রাণীর মালিক। অনলাইন জরিপে অংশ নেওয়া পোষাপ্রাণীর মালিকদের মধ্যে ৪৪ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৯৪ জন নারী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৪০ জন নারী-পুরুষ ছিলেন যাদের কোন পোষাপ্রাণী ছিল না। বৈবাহিক অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ অবিবাহিতদের অংশগ্রহণে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, ১৪০ জন পোষা প্রাণীর মালিকদের মধ্যে ৪০ জন বিষাদগ্রস্ত, আর বাকি ১০০ জনই উৎফুল্ল মনের অধিকারী। ফলাফলে দেখা গেছে, পোষাপ্রাণীর মালিকরা ৪১ শতাংশ বেশি প্রফুল্ল।
প্রাণীরা মন শান্ত রাখে এবং উদ্বিগ্নতা কমায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রাণী পোষে তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। বাড়িতে কুকুর থাকলে আপনার ঠিকই ভোরে বাইরে যাওয়া হবে। এতে সুবিধা হলো, একদিকে যেমন আপনার শরীর চর্চা হচ্ছে- এতে এনডরফিনস বাড়ে। ফলে আপনার শরীর ভালো লাগবে। অন্যদিকে ভোরের আবহাওয়া আপনার উৎসাহ বৃদ্ধি করবে।
আজকাল বেশিরভাগ শিশুই গ্যাজেটে আসক্ত। মোবাইল বা ট্যাব হাতে বেড়ে ওঠার ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটছে তাদের মানসিক বিকাশে। পোষাপ্রাণী থাকলে শিশু ব্যস্ত থাকবে প্রাণীকে নিয়ে। ফলে গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি গড়ে ওঠবে না। বাবা-মা দুইজনই কর্মজীবী হলে অনেক শিশুই একাকিত্বে ভোগে। সে সময়টায় তাদের চমৎকার সঙ্গী হতে পারে পোষা প্রাণী।
আশার কথা হচ্ছে পোষাপ্রাণীর সঙ্গে মানুষে সম্পর্কটি দেরিতে হলেও আমাদের সমাজে স্বীকৃতি পাচ্ছে, ব্যক্তি পর্যায় থেকে বেড়ে এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এমন একাধিক গ্রুপ দেখা যায়, যেখানে পোষাপ্রাণীর বিষয়ে একে অন্যকে পরামর্শ দিচ্ছেন। সন্ধ্যা বা সকালে অনেককে রাস্তায় কুকুরদের জন্য খাবার রেখে যেতে দেখা যায়।
অন্য প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের এই অন্যরকম সম্পর্ক নিয়ে ‘বন্ধু বোঝে আমাকে’ শিরোনামে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ট্যাগ লাইনে একটি অসাধারণ ওবিসি বানিয়েছে গ্রামীণফোন। যেখানে অলিগলির অপরিচিত কুকুরদের সঙ্গে একজন মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি অপরিচিত কুকুর একজন মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, বন্ধু হয়ে ওঠে। এই ধরনের কাজ গ্রামীণফোনের মত করপোরেট হাউসগুলোকে যেমন আরও বেশি জণসম্পৃক্ত করবে তেমনি আমাদের সমাজকে এ রমক ছোট ছোট পজিটিভ পতিবর্তনে আরো বেশি উৎসাহ জোগাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এম এম