ভেষজগুণ থাকার কারণে আদা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আদা মূলত অনেক রোগবালাই থেকে সেরে উঠতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ত্বক পরিষ্কারেও আদা খুবই উপকারী হতে পারে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য মুখের ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। কিছু গবেষণায় জানা গেছে যে, আদা ঘষে মুখ পরিষ্কারও করা যায়। তবে আদা দিয়ে মুখের পরিচর্যার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রসুন এবং আদার মধ্যে হার্ট-প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার লেভেলের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আদাতে রয়েছে বেশিরভাগ ঠাণ্ডা-সর্দিজনিত রোগের পেছনে দায়ী রাইনো ভাইরাস দমনের শক্তিশালী রাসায়নিক উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক এবং জর প্রতিরোধী হিসেবেও কাজ করে।
আদা শরীরের জোড়াগুলোতে সৃষ্ট ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের প্রদাহ দূর করে। কারণ আদাতে রয়েছে জিঞ্জারোল নামের একটি উপাদান। যা প্রদাহরোধী উপাদান। এটি প্রদাহজনক সাইটোকিন গঠন প্রক্রিয়াকে দমন করে। আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটুর অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো ব্যাপকহারে কমিয়ে আনে আদার নির্যাস।
বিষণ্ণতা কমাতে নিয়মিত আদা ও রসুন দিয়ে তরকারি রান্না করুন। এ দুই উপাদান মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এর পাশাপাশি এটি স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ উন্নত করতে সাহায্য করে।
জিমে যাওয়ার আগে আদা খান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী এবং প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভারী ব্যায়াম করার পর মাংসপেশিতে যে ব্যথা সৃষ্টি হয় তা দূর করে আদা।
জার্নাল অব পেইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন দুই গ্রাম আদা খান তারা ব্যায়াম করার ২৪ ঘণ্টা পর মাংসপেশিতে অনেক কম ব্যথা অনুভব করেন। দৌড়বিদসহ অন্যান্য ক্রীড়াবিদরাও আদা থেকে উপকৃত হতে পারেন। প্রদাহ এবং মাংসপেশির ব্যথায় ট্যাবলেটের চেয়েও বেশি কার্যকর আদা।
আদার সবচেয়ে বিস্ময়কর উপকারিতা হলো নারীদের ঋতুস্রাবকালীন ব্যথা লাঘব করে। জার্নাল অব অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঋতুস্রাবকালীন ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে আদা ইবুপ্রোফেন ওষুধের মতোই কার্যকর।
মাইগ্রেনের ব্যথা সবচেয়ে মারাত্মক ব্যথা। আদার রয়েছে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সংশ্লেষণ দমনের ক্ষমতা। যা রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে স্ফিত হওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইগ্রেনের ব্যথার চিকিৎসায় আদা ওষুধের মতোই কার্যকর।
জেনে নিই কোনো অবস্থায় অতিরিক্ত আদা খাওয়া যাবে না:
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অতিরিক্ত আদা খেলে পেশির সংকোচিত হয়ে প্রিটার্ম লেবারের আশঙ্কা বাড়াতে পারে। তবে মর্নিং সিকনেস কাটানোর জন্য অল্প আদা খাওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগে আক্রান্তদের অতিরিক্ত আদা খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। আদা খুব অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে অতিরিক্ত আদা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আদা রক্তকে পাতলা করে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। তাই সাধারণভাবে আদা খাওয়া উপকারী হলেও ইনসুলিনের মতো ওষুধের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে আদা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
এএটি