আয়শা আলমারি খুলে মেরুন রঙের একটি জামদানি শাড়ি পরলেন। এরপর তার ভাবিকে জিজ্ঞাসা করলেন তাকে কেমন লাগছে? আয়শার ভাবি তাকাতেই দেখলেন শাড়িটির ভাঁজে ভাঁজে একাংশে কেটে গেছে।
বাঙালি প্রতিটি নারীর কালেকশনেই অনেক পছন্দের শাড়ি থাকে। সেই শাড়িগুলো খুবই যত্ন করতে চান তারা, যেন সেসব শখের শাড়ি দীর্ঘদিন নতুনের মতো থাকে। কিন্তু খুব যত্ন নিলেও অজান্তেই কিছু ভুল করে ফেলেন তারা। আর তাতেই শখের শাড়ির বারোটা বাজে!
* মণিপুরী শাড়ি বাড়িতে ধুতে পারেন। সেক্ষেত্রে হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করুন। ভুলেও এই শাড়ি কচলিয়ে ধুবেন না। মণিপুরী শাড়ি রোদে শুকাতে ঝুলিয়ে দিন। দুই পাশ সমান রেখে ঝুলিয়ে দেবেন। তা নাহলে শাড়ির ধরন বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
* কাতান ও বেনারসি শাড়ি গায়ে জড়ানোর পর ক্যালেন্ডারওয়াশ করতে হয়। এটির জন্য ধোপার কাছে দিতে হবে। এরপর শাড়িটি যখন আলমারিতে রাখবেন তখন অবশ্যই হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ভুলেও কাতান ও বেনারসি শাড়ি ভাঁজ করে রাখবেন না। ভাঁজ করে কাতান ও বেনারসি শাড়ি রাখলে ভাঁজ পড়ে। এতে শাড়ি নষ্ট বা ভাঁজে ভাঁজে কেটে যায়। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে শাড়ি রাখলেও মাঝেমধ্যে পাল্টে দেবেন। একই ভাঁজে বেশি দিন রাখা যাবে না। কাতান ও বেনারসি শাড়ি ভুলেও রোদে দেবেন না। রোদে দিলে কাতান ও বেনারসি শাড়ির রং নষ্ট হয়ে যায়।
* কিছু শাড়ি আছে গরম পানিতে কাচা উচিত নয়। কিন্তু সে কথা অনেকেই জানেন না। অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে গরম পানি ভিজিয়ে দেন। তখন শাড়ি খারাপ হয়ে যায়।
* সুতির শাড়ি সরাসরি আয়রন করা যায়। কিন্তু সিল্কের শাড়ির ক্ষেত্রে এই ভুল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সিল্কের শাড়ির ওপরে সুতির কাপড় বিছিয়ে আয়রন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
* যেকোনো শাড়ি পরার পর কড়া রোদে দেওয়া উচিত নয়। এতে শাড়ির রং খারাপ হতে পারে। তাই যে স্থানে রোদের আভা আসে, সেখানে শাড়ি মেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে শাড়িটি ভালো থাকবে।
*টাঙ্গাইল ও তাঁতের শাড়ি হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্টে আধা ঘণ্টা শাড়ি ভিজিয়ে রাখুন। পরে হালকা কেচে নিন। বেশিক্ষণ রোদে রাখবেন না। তাহলে শাড়ির উজ্জ্বলতা নষ্ট হবে।
* জামদানি শাড়ি পরার পর আপনাকে ধোপার কাছে কাটাওয়াশ করতে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে জামদানি শাড়ি পরিষ্কার করা হয়। আলমারিতে রাখার সময় ভাঁজ না করে রেখে শখের জামদানি শাড়িটি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। অথবা শাড়িটি রোলারে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। ভাঁজ করে রাখলে জামদানি শাড়ির মাঝেমাঝে কেটে যায়। এতে শাড়ি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
* জামদানি শাড়ি কেনার পর পাড়ে অবশ্যই ফলস লাগিয়ে নেবেন। আঁচলে লাগিয়ে নিন নেট। এতে পাড় ভাঁজ হবে না বা ঘষা লেগে নষ্ট হবে না জামদানি শাড়ি।
*রেশমি শাড়ি একটু সাবধানেই পরতে হয়। পরার পর রেশমের তৈরি সিল্কশাড়ি ড্রাইওয়াশ করতে দেবেন। এসব শাড়ি ভাঁজ না করে বরং হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। যদি সিল্ক শাড়িতে দাগ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে দাগের অংশে পাউডার দিয়ে রাখুন।
* জর্জেট ও শিফন শাড়ির বেলায় আলমারিতে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই ভাঁজ করেই রাখুন। কাজ করা জর্জেট শাড়ি উল্টো করে ভাঁজ করুন। এই ধরনের শাড়ি ড্রাইওয়াশে দিয়ে পরিষ্কার করুন। বাসায় ধুতে চাইলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। পানি ঝড়িয়ে হালকা রোদে মেলে দিন।
* বাড়িতে তাঁতের শাড়ি পরিষ্কার না করাই উচিত। পরিষ্কার যদি করতেই হয় ড্রাইওয়াশ করতে দিন। ভুলেও ওয়াশিং মেশিনে তাঁতের শাড়ি ধুতে দেবেন না। এতে তাঁতের শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁতের শাড়ি আলমারিতে রাখার আগে অবশ্যই আয়রন করবেন। যদি দীর্ঘদিন শাড়ি পরা না হয়, সেক্ষেত্রে তাঁতের শাড়িগুলো মাঝেমধ্যে খুলে বাতাসে রাখুন ও ভাঁজ উল্টেপাল্টে করে দিন।
* কর্পূর বা ন্যাপথালিন কখনো শাড়ির ভেতরে রাখবেন না। ছোট কাপড়ে বা কাগজে মুড়িয়ে আলমারির এক কোণায় রাখুন।
* যেকোনো শাড়ি পরা পর কখনো বডি-স্প্রে বা পারফিউম ব্যবহার করবেন না। এতেও প্রিয় শাড়িটিতে দাগ পড়ে যেতে পারে।
* যেকোনো অনুষ্ঠানে পরা শখের শাড়িটি আলমারিতে তুলে রাখার আগে অবশ্যই ফ্যানের বাতাসে ভালো করে শুকিয়ে নিতে ভুলবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এএটি