ঢাকা, শনিবার, ২০ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

পরীক্ষার মৌসুমের জন্য ব্রেন বুস্টার- একাডেমিক পারফরম্যান্সে পুষ্টির ভূমিকা

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
পরীক্ষার মৌসুমের জন্য ব্রেন বুস্টার- একাডেমিক পারফরম্যান্সে পুষ্টির ভূমিকা

পরীক্ষার মৌসুম শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন একটি সময়, যখন তাদের মানসিক ও শারীরিক শক্তির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রতিযোগিতার এই যুগে শুধু অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রম যথেষ্ট নয়; সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেও পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরও কার্যকর করা সম্ভব।

পুষ্টি শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতেও বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক পুষ্টির অভাবে ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং একাগ্রতার অভাব দেখা দিতে পারে, যা একাডেমিক সাফল্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বজুড়ে গবেষণা বলছে, পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় সুষম খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের মেমোরি, কগনিটিভ স্কিল এবং মনোযোগ বাড়ে। এর বিপরীতে, ভুল খাদ্যাভ্যাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় এবং পরীক্ষার চাপ মোকাবিলায় বাধা সৃষ্টি করে।  

মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় পুষ্টির প্রভাব
মস্তিষ্ক একটি অত্যন্ত সক্রিয় অঙ্গ, যা আমাদের শরীরের প্রাপ্ত শক্তির প্রায় ২০% ব্যবহার করে। পরীক্ষা চলাকালে, মস্তিষ্কের এই শক্তি চাহিদা আরও বেড়ে যায়। সঠিক পুষ্টি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে এবং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়।

পুষ্টি উপাদান ও মস্তিষ্কের ভূমিকা
১. গ্লুকোজ: মস্তিষ্কের প্রধান জ্বালানি। পুরো শস্য, ফল এবং শাকসবজি থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্লুকোজ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ, আখরোট, এবং চিয়া সিডে পাওয়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষ মেরামত এবং নিউরনের কার্যক্রম বাড়ায়।
৩. ভিটামিন বি: ভিটামিন বি৬, বি১২, এবং ফলেট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলি পাওয়া যায় ডিম, মাংস, এবং দুধজাত খাদ্যে।
৪. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, এবং অন্যান্য রঙিন ফল মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
৫. পানি: পর্যাপ্ত পানি পান করা মস্তিষ্কের হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

পরীক্ষার সময় আদর্শ খাবার পরিকল্পনা

সকাল:
সকালের খাবার দিন শুরু করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
•    ওটমিল বা কর্ণফ্লেক্স
•    একটি সেদ্ধ ডিম
•    ফলের জুস বা একটি আস্ত ফল
মধ্যাহ্নভোজ:
মধ্যাহ্নভোজে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও শর্করা থাকা উচিত।
•    বাদামি চালের ভাত বা রুটি
•    মুরগির মাংস বা মাছ
•    শাকসবজি এবং দই
বিকেলের নাশতা:
এই সময়ে হালকা, তবে শক্তিবর্ধক খাবার গ্রহণ করা উচিত।
•    আখরোট বা কাঠবাদাম
•    গ্রিন টি বা লেবুর শরবত
•    একটি কলা
রাতের খাবার:
রাতে হালকা, কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
•    মুরগির স্যুপ বা ডাল
•    সবজি এবং সালাদ
•    দুধ

পরীক্ষার সময় যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত 
পরীক্ষার সময় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
১.    চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: চকলেট বার, সফট ড্রিংক, এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার অল্প সময়ের জন্য শক্তি দেয়, তবে দ্রুত ক্লান্তি আনে।
২.    ফাস্ট ফুড: ফাস্ট ফুডে থাকা ট্রান্স ফ্যাট এবং উচ্চ লবণাক্ততা মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করতে পারে।
৩.    ক্যাফেইনের অতিরিক্ত ব্যবহার: ক্যাফেইন সাময়িকভাবে উদ্দীপনা সৃষ্টি করলেও অতিরিক্ত গ্রহণে উদ্বেগ এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

অন্যান্য টিপস
•    পর্যাপ্ত ঘুম: পুষ্টি যতই ভালো হোক, ঘুমের অভাব হলে মস্তিষ্ক তার পূর্ণ কর্মক্ষমতা দেখাতে পারে না।
•    শারীরিক ব্যায়াম: প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং মনোযোগ উন্নত করে।
•    মেডিটেশন: পরীক্ষার উদ্বেগ কমাতে মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম উপকারী।

পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ক যেন তার সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতায় কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সঠিক পুষ্টি অপরিহার্য। খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে তারা তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, ভালো পুষ্টিই ভালো প্রস্তুতির মূল চাবিকাঠি। তাই, আগামী পরীক্ষার জন্য সঠিক পুষ্টির দিকে নজর দিন এবং নিজের সক্ষমতাকে আরও উজ্জ্বল করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।