ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

লাভ সিম্বল -ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল

শাহ্ মারুফ মোরশেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২
লাভ সিম্বল -ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল

মেয়েদের হোস্টেলের সামনে, এই রাতের বেলা দাঁড়িয়ে থাকা বেশ রোমাঞ্চকর! নানা জনের মুখের বিচিত্র অভিব্যক্তির  দেখা পাওয়া যায়। কেউ আমাকে দেখে কৌতুহলী চোখে, আবার কেউ দেখে দুষ্টুমি ভরা দৃষ্টিতে, কেউ কেউ আবার তাকিয়ে থাকে হতাশা নিয়ে।

তবে আমার কেন জানি হতাশ চোখগুলো দেখতেই ভালো লাগে। তাদের সম্ভাব্য শিকার হওয়ার হাত থেকে যে আমি বেঁচে গেছি-সেটা ভেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। তবে বসে বসে শুধু মেয়ে দেখা আমার উদ্দেশ্য নয়।

আসলে কাঁপাকাঁপা বুকে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মধ্যিখানে এই সুন্দরী ললনাদের দিকে তাকিয়ে বুকটা শান্ত করা আরকী।

মনে হচ্ছে একটু লাফিয়ে নিলে আরো ভালো হতো। বুকের চাপটা অন্তত একটু হলেও কমতো।

আজ আমাকে উত্তরটা জানতেই হবে? নাকি আমাকেই প্রশ্নটা করতে হবে? তবে যাই হোক, একটা কিছু আজ করতেই হবে! আর অপেক্ষায় রবো কতদিন? এত সুন্দর রাত, কিন্তু মামাদেরও তো আশপাশে দেখা যাচ্ছে না। আজ না বলতে পারলে আর কবে বলবো।

আমি আর তনয়া, বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিনই নাস্তা করি। সেখানে নানা হাসি-তামাশা থাকেই। আমার কাছে তনয়ার ফোন নাম্বার থাকাতে আমাদের মধ্যে যোগাযোগও হতো নিয়মিত। ফলে বন্ধুদের মাঝেও আমাদের দু’জনের কেমিস্ট্রি ছিল দেখার মতো। আমি উপভোগ করে যাচ্ছিলাম সময়গুলো, মুহূর্তগুলো। মনে হয় আমি ওর প্রতি একটু দুর্বলই ছিলাম। প্রথম দেখাতেই ওর দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, ওর সঙ্গে আমার কিসের কি জানি একটা যোগ আছে। কিন্তু চেষ্টা করেও সেটা ধরতে পাচ্ছিলাম না। শেষমেশ যখন রাকুর সহায়তায় ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের  একটা সম্পর্ক তৈরি হয়-আমার আশাগুলো যেন একটার উপর আরেকটা সিঁড়ি তৈরি করে যেতে থাকে। আমি কিন্তু বেশ আশাবাদীই ছিলাম। আর তনয়ার হাসিমুখ, যেন আমাকে আরো উৎসাহ দিয়ে যেতে লাগলো।

কিন্তু যা হবার তা ঘটে গেল আজকেই। আজ সকালে বাদর ছেলে মারুফ, আমাদের দু’জনকে একসঙ্গে পেয়ে বলে ‘কিরে নতুন জুটি; ভ্যালেন্টাইন গিফট কি দিবি?’

‘শালা নিজেতো প্রেম করে না! আমার খবর নিয়ে তুই কি করবি? তবে নতুন জুটির খেতাব পেয়ে আমি মনে মনে বেশ খুশি। আমিও তাই হাসি হাসি মুখে বলে দিলাম ‘দেখি দেখি’।  কিন্তু মারুফের চোখ তখন অন্যদিকে-আমি সেই চোখ অনুসরণ করে দেখি, আমার তনয়ার মুখে মেঘ। আমি কত স্বার্থপর, ওই সময়টাতে তনয়াকে বুঝলাম না। নাকি আমাকে ও শুধুই বন্ধু ভাবে। তাহলে তো আর এভাবে কথা বলা যাবে না। আমার বন্ধুগুলো এমন কেন? আরো কিছুদিন আমরা মিশতে পারতাম। আরো কিছুদিন আমরা দূর থেকে একে অপরকে দেখে হাসি দিতে পারতাম। সামনে মনে হয় একটা অন্ধকার। নাহ! প্রশ্নটা আজ করতেই হয়।

জ্যোৎস্নাবিহীন একটা রাতে, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। দু’একটা জুটি আশপাশে হাঁটাহাঁটি করছে-আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। যাক! ওরা তো আর আমার মনের অবস্থা জানে না। আমার পুরো নজর তখন ওদের নেমে আসা সিঁড়ির দিকে।

কখন আসবে ও? যার মুখের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি আমার মুখস্থ, যার চোখের সামান্য কথাটিও আমার অজানা নয়-সে কখন আসবে? কি জানি কি আছে তাহা অন্তরে?

-কি খবর শুভ্র? পড়াশুনার কি খবর? চমকে উঠলাম আমি।

-‘এইতো চলে কোনোরকম’ যথাসম্ভব হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করি নিজেকে।

-তোকে আমার কিছু বলার ছিল?

-বল? বল?,  ঠোটের কিনারায় একটা হাসি ফুটে উঠে। তাহলে কি আমার মতো ও একই কথা ভাবছে। মিস করছে সেই সুন্দর সময়গুলো।

তবে সেই হাসি বেশিক্ষণ থাকেনি। আর আমরা একসঙ্গে হাঁটবো না, দুষ্টুমি করবো না। বেশুমার ফোনে কথা বলবো না-শুধুমাত্র মানুষ কি ভাববে এই কথা চিন্তা করে? ওহ আল্লাহ! আমার হার্টের যদি কোনো চোখ থাকতো! সেদিক দিয়ে তখন আমার রক্ত কান্না হয়ে ঝরছিল।

কী কাপুরুষ আমি-তখনো হাসিমুখে হ্যা হ্যা করে চলেছি। এত নিষ্ঠুর! ও কি আমার চোখের কিনারে জল দেখে না।

অবশেষে বিদায় বেলা। বিদায় দেবার জন্য হাঁটছি। এই সময়টুকুতে ওর সঙ্গে প্রাণভরে কথা বলতে ইচ্ছে করছে আমার। আমি সারাজীবন ওর সঙ্গে কথা বলে যেতে চাই। আমি সারাজীবন ওর হাতের নম্রতায়, ওর কথার প্রগলভতায় ডুবে থাকতে চাই। হে রাত তুমি নিশ্চুপ কেন? আমার সঙ্গে তুমি কাদঁতে পারো না ? আমরা একই ছাতার নিচে পাশ ঘেঁ‍ষে হেঁটে যাব। একটু আদরের জ্যোৎস্না দাও, ও আমাকে হাসিমুখে বলবে-‘দেখ শুভ্র কি সুন্দর চাঁদ’।  

গেটে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে ওকে বললাম ‘এই একটু শোন’,

রাতের ফুলগুলো তখন মধুর সুবাস ছড়িয়ে নতুন দিনের সুবাস সংগ্রহে ব্যস্ত। মিষ্টি বাতাস তাদের সবার নজরকে হঠাৎ আকাশের দিকে ফিরিয়ে নিলো। সবাই আনমনে দেখলো-একটা তারা আরেকটা তারাকে কী সুন্দর করে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই হাত নির্ভরতার, সেই হাত ভালোবাসার। আহ কী সুন্দর সুবাস, এতদিন কোথায় ছিল সেই সুবাস? প্রেমের আলোয় প্রজ্বলিত, মিষ্টি হাসিতে সুবাসিত-ফুলের চেয়ে কে বেশি সুবাস ছড়াতে পারে বলুন।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।