ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

প্রজাপতির রাজ্যে তিন দম্পতি

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ছবি: সোহেল সরওয়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪
প্রজাপতির রাজ্যে তিন দম্পতি

চট্টগ্রাম: চারদিকে সবুজের ছায়া। নানা রঙের ফুল।

হরেক রঙের প্রজাপতি উড়ছে আপনার চারপাশে। এমনটি হয়তো কল্পনা করা যেতে পারে। কিন্তু কল্পনার এ জগৎকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ইন্ট্রাকো গ্রুপ। চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার কর্ণফুলী মোহনায় ইন্ট্রাকো গ্রুপ নির্মাণ করেছে বিনোদন কেন্দ্র ‘বাটারফ্লাই পার্ক’।

‘একসঙ্গে এত প্রজাপতি এর আগে কখনো দেখিনি, এখানে হরেক রঙের প্রজাপতি দেখে আমি মুগ্ধ। ’ প্রজাপতি পার্ক নিয়ে এভাবেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বাংলানিউজের মাই ভ্যালেন্টাইন শীর্ষক ফটো কনটেস্টে বিজয়ী হাসিব হাসান।

বাংলানিউজের এমন ভালোবাসার উপহার পেয়ে পার্কটি ঘুরে গেছেন নাজিফা ও ইমরান, আবু রায়হান চৌধুরী ও জেবুন নাহার, রুমানা নুজহাত ও হাসিব হাসান দম্পতি।

ষাটোর্ধ্ব আবু রায়হান চৌধুরী ও পঞ্চাশোর্ধ জেবুন নাহার দম্পতি। বার্ধক্য যাদের ছুঁতে পারেনি এখনো। বিয়ের ৩৭ বছর কেটে গেছে। এখনো একে অপরের প্রতি অতটুকু ভালবাসা কমেনি। বাংলানিউজের মাই ভ্যালেন্টাইন শীর্ষক ফটো কনটেস্টে বিজয়ী হয়ে চট্টগ্রামে আসেন দু’জন। কথা হয় দুজনের সঙ্গে।

রাজ্যের সুখানুভূতি জেবুন নাহারের চোখে মুখে। কথার ফাঁকে ফাঁকে বারংবার বাংলানিউজের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন। বললেন,‘৩৭ বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম স্বামীকে দু’দিনের জন্য একান্তে পেয়েছি। আমাদের ৩৭তম বিবাহবার্ষিকী’র ছবিটি আমার ছেলে বাংলানিউজে পাঠিয়েছিল। যখন শুনলাম আমরা বিজয়ী হয়েছি। তখন খুবই খুশি হলাম। কিন্তু শংকাও ছিল মনে। কারণ আমার স্বামী ছুটি নিয়ে যাবে কি না। আমি ভাবতেও পারিনি সে আমার জন্য ছুটি নিবে। সত্যি আমি বাংলানিউজের প্রতি কৃতজ্ঞ। জীবনে এমন একটি স্মরণীয় সময় উপহার দেওয়ার জন্য। ’

আবু রায়হান চৌধুরী বললেন, ‘আমি মাহমুদ গ্রুপের ডিজিএম হিসেবে আছি। অফিসের ব্যস্ততার কারণে বাসার বাইরে আসলে স্ত্রীকে তেমন সময় দিতে পারি না। এনিয়ে তার অনুযোগও ছিল। কিন্তু এখনতো তার সময় কাটে নাতি নাতনি নিয়ে। আর আমার অফিস। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এমন একটি সুযোগ আসবে ভাবতে পারিনি। ভাবছি মৃত্যুর আগে স্ত্রী’র অনুযোগ থেকে মুক্তি পেলাম। যার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বাংলানিউজের। ’

রুমানা নুজহাত ও হাসিব হাসান দম্পতি। খুবই চটপটে। দু’বছর আগে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। দু’জনই মার্চেন্ডাইজিংয়ের কাজ করেন। চাকরির কারণে বিয়ের আগে বা পরে ভালবাসা দিবস তেমন পালন করা হয়নি। করা হলেও তাও ছিল খুবই অনাড়ম্বর। বাংলানিউজের ফটো কনটেস্টে জিতে দু’জনই এসেছেন চট্টগ্রামে।

হাসিব হাসান ও নুজহাত জানান, এভাবে ভালবাসা দিবস আর কাটাননি। সত্যি খুব উপভোগ করেছি। বাংলানিউজের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।  

নাজিফা ও ইমরান জানান, প্রজাপতির মেলায় দু’দিন যেন রঙিন জীবন কাটালাম। খুব ভালো লেগেছে। তারাও বাংলানিউজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন।

তিন দম্পতিই একরাত দু’দিন থেকেছেন প্রজাপতি পার্কের রিসোর্টে। পার্ক কর্তৃপক্ষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ তারা। জানালেন, দেশে এমন একটি অসাধারণ পর্যটন স্পট আছে জানাই ছিল না। একদিকে সাগর অন্য পাশে ফুল বাগানে প্রজাপতির উড়াউড়ি। কান পাতলেই সাগরের উত্তাল গর্জন। রাতের কর্ণফুলী নদী দেখার অভিজ্ঞতাও ছিল অন্যরকম।  

২০০৯ সালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় ৬ একর জমিতে ৮০ প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে অক্টোবরে পার্কটির উদ্বোধন করা হয়। পার্ক তৈরির শুরু থেকে পরামর্শক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রজাপতি গবেষক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী। তার দীর্ঘদিনের গবেষণা ও পরিশ্রম এবং ইন্ট্রাকো গ্রুপের সহায়তায় তৈরি হয় ব্যতিক্রমী এ পার্কটি। এ পার্কে রয়েছে প্রজাপতির ওপর শিক্ষণীয় বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংবলিত একটি জাদুঘর। দুর্লভ প্রজাতির প্রজাপতিরও দেখা মিলবে এখানে।

দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে পার্কের বিশাল জায়গাজুড়ে কৃত্রিম ঝরনা ও লেক। লেকে আছে রঙিন মাছ। পার্ক কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা খাবার দিয়ে পর্যটকরা উপভোগ করেন রঙিন মাছের ছুটাছুটি। পার্কে শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। আছে রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টও। রয়েছে একটি পার্টি হলও। যে কেউ চাইলে বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠানগুলো এখানকার পার্টি হলে উদযাপন করতে পারেন। তবে এজন্য এটি আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।

বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার মেজর (অব.) সৈয়দ সেলিম ইরশাদ বলেন, ‘এ পার্কে সব বয়সের মানুষের ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পার্কটির প্রতিটি কাজ দৃষ্টিনন্দন এবং আন্তর্জাতিকমানের করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রজাপতির জন্য আলাদা জোনটি পুরোপরি রেইন ফরেস্ট আদলে গড়া। প্রজাপতি বাঁচানো গেলে পরিবেশ  ও প্রকৃতিও সংরক্ষিত থাকবে। তাই এ সচেতনতা তৈরি করতেই এ পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ’

বাংলানিউজের সঙ্গে এধরনের  সফল একটি অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিয়াদ আলী সন্তুস্টি প্রকাশ করে বলেন, আমরা সব সময় এমন আয়োজনে বাংলানিউজের সঙ্গে আছি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।