ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

একটি স্বপ্ন অনেক সম্ভাবনা

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪
একটি স্বপ্ন অনেক সম্ভাবনা

সোনালীর বয়স সাত বছর। বাবা মা নেই, নানীর সংসারে অভাব আর অবহেলায় বেড়ে উঠছে সে।

পাশের বাড়ির তারই বয়সী মেয়েটি যখন বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। সোনালীর চোখ বেঁয়ে পানি পড়ে। সে তথন ব্যস্ত রান্নার লাকড়ি জোগাতে।

ছোট্ট সোনালী কখনো ভাবেনি সে স্কুলে যাবে, ভালো কাপড় পরবে, পেট ভরে খেতে পাবে। তার থাকার জন্য সুন্দর একটি বিছানা থাকবে, জন্মদিনে কেক কাটবে, পাশের বন্ধুরা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে হাত তালি দেবে, তার জন্য উপহার আসবে। আর সবচেয়ে বড় কথা সে একজন মা পাবে। সোনালীর জন্য এগুলো রূপকথার মতো শোনাচ্ছে তো, কিন্তু তার জীবনে আজ এটাই সত্যি। সমস্ত দুঃখগুলোকে বিদায় দিয়ে সুন্দর নিরাপদ এক পরিবেশে আজ বেড়ে উঠছে সোনালী। সে আজ স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সমাজের দরিদ্রদের সেবা দেবে। আর এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে একজন মায়ের ভালোবাসায়।

আয়েশা আক্তার জাহান, একজন সফল ব্যবসায়ী-একজন মা। তার সন্তানদের যখন খেলনা কিনে দেন হাজার টাকায়, তখন তার মন কাঁদে সেসব অবহেলিত শিশুর জন্য। যারা পেট ভরে খেতেও পায় না। তাইতো ঢাকার অদূরে গাজীপুরে সমাজের অসহায় মেয়ে শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন পিপল্স রোকেয়া ফাউন্ডেশন। এখানে শিশুদের জন্য উন্নত ও নিরাপদ জীবনের সব ব্যবস্থাই করেছেন তিনি।

সারা সপ্তাহ কাজ শেষে আমরা সবাই যখন ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে আনন্দ করে কাটাতে চাই, আয়েশা আক্তার ছুটে যান এই শিশুদের মাঝে। আর শিশুরা তাকে আম্মু ডাকে, তিনিও তাদের বুকে টেনে নিয়েছেন, নিজের সন্তানদের মতোই। প্রতিবারই যাওয়ার সময় ওদের জন্য খেলনা আর উপহার নিয়ে যান। এতো ব্যস্ততার মাঝেও ওদের জন্মদিন ঠিক মনে রাখেন। ওদের কারও জন্মদিন থাকলে কাজ শেষে কেক নিয়ে হাজির হন সেখানে। আর ওদের জন্য বড় উপহার হচ্ছে মা কে কাছে পাওয়া।

বিদায়ের সময় যেমন শিশুদের চোখ ভিজে যায়, তেমনি তাদের মা-ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না।    

এখানে শিশুদের জন্য থাকা খাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলা সব কিছুর সুব্যবস্থা রয়েছে। মাত্র বছর খানেক আগে যাত্রা শুরু করা এই শিশুস্বর্গে এখন ২৩ জন মেয়ে শিশু রয়েছে। আয়েশা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‍তার মায়ের নামে রোকেয়া ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। তিনি দেশের প্রতিটি নারীর সুন্দর, শিক্ষিত আর নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে চান। তিনি জানেন তার একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, কতটুকু সমাজের এই মেয়েগুলোর উপকারে আসতে পারবেন, তা নিয়েও কিছুটা সংসয়ে ছিলেন তিনি। তবে পরিবারের পূর্ণ সমর্থন ও বিশেষ করে এক ছোট ভাই কাজী তাইফ সাদাত তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে মহৎ এই কাজ শুরু করতে।

সম্পুর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে চলছে পিপল্স রোকেয়া ফাউন্ডেশন। তবে তিনি কারও কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান না। তিনি চান যাদের সামর্থ আছে সবাই যেন নিজের জায়গা থেকে অবহেলিতদের সাহায্য করে। শুধু কিছু ‍অর্থ দিয়ে নয়, তার জীবন গড়ে দেয়ার দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করেন আয়েশা আক্তার। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজের এই অংশটির উন্নয়নই পারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, টেকসই, উন্নত দেশ গড়তে।

আর শুধু মেয়েদের সাহায্য কেন করছেন, জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজের কাছে বলেন, আসলে মেয়েদের বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য আমাদের সমাজটা একেবারেই নিরাপদ নয়, এখানে ৬ বছরের একটি শিশুকে ৩০ বছরের পুরুষের নোংরা চাওয়ার বলি হতে হয়, সে তুলনায় একটি ছেলে ঠিকই তার জায়গা করে নিতে পারে।

বর্তমানে ২৩টি শিশু থাকলেও তিনি আরও শিশুর দায়িত্ব নিতে চান।

বন্ধুরা আপনাদের চারপাশে এতিম অসহায় মেয়ে শিশু থাকলে আমাদের জানান, বাংলানিউজের বিএনএসএস-এর মাধ্যমে শিশুদের যোগাযোগের নম্বর ও তথ্য পিপল্স রোকেয়া ফাউন্ডেশনকে দেয়া হবে।

সমাজের দুঃস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বাংলানিউজের নিজস্ব ত্বত্তাবধানে পরিচালিত হচ্ছে 'বাংলানিউজ সোশ্যাল সাভির্স' (বিএনএসএস) সামাজিক সেবা কর্মসূচি।   
যোগাযোগ করুন: বিএনএসএস এর আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম, ফোন: ০১৯৩৭১৯৯৩৭৬ বা ইমেল: [email protected]

কাজী তাইফ সাদাত
কো ফাউন্ডার-পিপল্স রোকেয়া ফাউন্ডেশন
ফোন: ০১৭১১১৪৪১৭৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।