একবার ভাবুনতো কোন কোন বিষয় আপনার কাছে স্বাস্থ্যকর আর কোন বিষয়টি নয়! স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আর নিয়মিত শরীরচর্চার কথা বলে এ প্রশ্নের হাত থেকে নিস্তার পেতে চাইবেন অনেকেই। কিন্তু সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রয়েছে আরও কিছু কৌশল, যা সত্যিই অবাক করার মতো, চমকপ্রদ সাতটি কৌশল জানাচ্ছেন- এজি মাহমুদ।
অ্যালার্ম ঘড়ির ছুটি
কর্মমুখর ব্যস্ত জীবনে অ্যালার্ম ঘড়ির চিৎকার ছাড়া যেন সকালের ঘুমটাই ভাঙে না অনেকের। কিন্তু দিনের শুরুটাই যদি হয় ঘড়ির অ্যালার্মের সুতীক্ষ্ণ কোনো দুর্বিষহ অস্বস্তিকর আওয়াজে তাহলে আপনার মানসিকতাই বদলে গিয়ে হয়ে উঠতে পারে খিটমিটে। সকালে ঘুম ভাঙানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে সূর্যের কোমল প্রাকৃতিক আলোক রশ্মিকে। আর তাই বেডরুমে বিছানাকে এমনভাবে রাখুন যেন সকাল হতেই সূর্যের আলো এসে ছুঁয়ে যেতে শুরু করে আপনাকে। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে রুমে এমন আলোর ব্যবস্থা করুন যেন নির্দিষ্ট সময়ে ক্রমান্বয়ে আলোকিত হয়ে সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এই আলো আপনাকে এতটাই স্বাভাবিকভাবে জাগিয়ে তুলবে যা আপনার মনের চাঙ্গাভাব ও কর্মশক্তি বাড়িয়ে দেবে দিনের বাকি সময়ের জন্য।
পরিকল্পনায় পথচলা
যত যাই করুন না কেন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা কোনোভাবেই আপনাকে ধরা দেবে না। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবন গড়তে প্রতিদিনের পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি রাখা প্রয়োজন। সবগুলো কাজের তালিকা না থাকলেও অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তালিকা থেকে বাদ না যায়। এছাড়াও যখন তখন অধিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া বা ইচ্ছে হলেই ডাম্বেল হাতে দু’তিন মিনিট ব্যায়াম করে নেওয়া ইত্যাদি অস্পষ্ট পরিকল্পনার চেয়ে বরং আপনি প্রতিদিন কী খাবেন তার জন্য একটি সুস্পষ্ট খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করতে পারেন। পাশাপাশি ব্যায়ামের জন্য সঠিক সময় ও স্থান আগে থেকেই নির্বাচন করে রাখুন। তাহলে সুস্বাস্থ্য নিয়ে টেনশনের হাত থেকে যে, আপনি চিরতরে রেহাই পেতে যাচ্ছেন সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়।
শুরুটা হোক ইতিবাচক
সকালে চায়ের কাপ হাতে দৈনিক পত্রিকার পাতা না উল্টালে অনেকের কাছেই দিনটা পানসে ঠেকে। সারা দুনিয়ায় কী ঘটছে কিংবা ঘটতে চলেছে তা জানার জন্য পত্রিকা তো পড়তেই হবে। কিন্তু পত্রিকার নেতিবাচক খবরগুলো দিনের শুরুতেই আপনাকে ডুবিয়ে দিতে পারে হতাশায়। তাই শুধু নেতিবাচক খবরই নয় সকালটা যদি শুরু করতে চান ইতিবাচকভাবে তাহলে চোখ বুলাতে পারেন প্রিয় কবির কোনো কবিতা, দূরের বন্ধুদের ই-মেইল কিংবা পুরানো কোনো চিঠির পাতায়। এই পদ্ধতি কেবল স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং কর্মক্ষমতার জন্যই উপকারী নয় বরং দেখা গেছে ইতিবাচক মনোভাব হৃদরোগসহ আরও অনেক শারীরিক সমস্যাকেও দূরে সরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
কাজের টেবিলে খাবার নয়
সারাদিন কাজের খুব প্রেসার যাচ্ছে? টেবিল ছেড়ে নড়তেই পারছেন না, এমন অবস্থা? কাজের পরিমাণ যতই হোক না কেন, দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে অবশ্যই টেবিল ছাড়তে হবে আপনাকে। কাজের চাপে পড়ে দুপুরের খাবার কখনোই অফিসের টেবিলে সারবেন না। ব্রেকে যাওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়া শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রের অনেক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে খাবারের বিরতির সময়টুকু টেবিলে নষ্ট করার ফলে আপনি শারীরিকভাবেও দীর্ঘ মেয়াদে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। এছাড়া আরও একটি গোপন তথ্য হলো, এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকলে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর আক্রমণে পরাস্ত হতেও বেশি সময় লাগবে না আপনার। কারণ সম্প্রতি অ্যারিজন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসের চেয়ার-টেবিল টয়লেটের কমোডের চেয়েও ৪০০ গুণ বেশি পরিমাণ জীবাণু ধারণ করে থাকে।
খাদ্যাভাসের বাইরে নয়
কোথাও বেড়াতে গিয়ে প্রিয়জনের অনুরোধে অনেক সময় পাশ কাটাতে হয় নিয়মিত খাদ্যাভাসকে। খেতে বসে যেতে হয় বাইরে কোথাও। স্বভাবতই খাবারের তালিকায় তখন চলে আসে ফাস্টফুড কিংবা অতিরিক্ত ভোজ্যতেল মিশ্রিত খাবার। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে এই খাওয়াটা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়ে যায়। অপরিমিতভাবে এভাবে যখন তখন বাইরের খাবার খেতে শুরু করলে তৈরি হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ একবার যদি খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে ফেলে পরবর্তীকালে তা খেতে ভালো লাগুক আর নাই লাগুক ক্ষুধা পেলেই তার খেতে ইচ্ছে করবে। তাই নিজের খাদ্য তালিকাকে ঝামেলাবিহীন সুস্থ রাখতে খাদ্যাভ্যাস যখন-তখন বদলে ফেলা চলবে না একেবারেই।
গানের মূর্ছনায় স্বাচ্ছন্দ্য
আপনি আপনার কাজে যাচ্ছেন, টেবিলে বসে আছেন বা ছোট খাটো কোনো কাজ করছেন এমন সময় প্রিয় গানগুলো শোনা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। গান আপনাকে এনে দেবে স্বাচ্ছন্দ্য, কাজে আনবে গতি, উন্নয়ন ঘটাবে মানসিকতার। সম্প্রতি ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গান শোনা হার্টের সক্ষমতা বাড়ায়, দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ছোট খাটো কাজ বা শরীরচর্চার সময় গান শুনলে তা শরীরচর্চা বা কাজকে ১৫ শতাংশ বেশি মাত্রায় স্থায়িত্বের সুযোগ করে দেয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
তবুও ডায়েরি লিখুন
শেষ কবে আপনি ডায়েরির পাতায় হাত দিয়েছিলেন তা হয়তো আপনার মনে নেই। জীবনের নানামুখী ব্যস্ততার স্রোতে আগের মতো ডায়েরির পাতা উল্টে আর লিখে যাওয়ার সময় হয় না। সম্প্রতি এক গবেষণা দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ডায়েরি লেখা শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হতাশা দূর করে স্নায়ুচাপ প্রতিরোধে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাছাড়া ডায়েরিতে লিখে রাখা কোনো পুরানো স্মৃতি আপনার জীবন গঠনে সহায়তা করতে পারে ইতিবাচকভাবে। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় সারা দিনের কাজের হিসেব দিতে পারেন নিজের কাছেই। সমস্যাগুলো তখন আপনা আপনিই ধরা পড়বে আপনার চোখে। সব কাজের হিসেবের যাচাই বাছাই করে এভাবেই আগামী দিনের জন্য আবার নিজেকে তৈরি করুন নতুনরূপে।
ভালো থাকুন...