দিন যেন অনেক লম্বা, সময় কাটতেই চায় না। আর রাত তো জেগেই কাটে।
সেদিন কথা হচ্ছিল প্রেমার সাথে। তার কষ্টগুলো কাউকে বলতে পারছে না। আবার সহ্য করাও যে কতো কষ্টের।
আমাদের দেশের অনেক মেয়ের সঙ্গেই হয়তো মিলে যাবে প্রেমার গল্প। শিক্ষিতা সুন্দরী প্রেমা আবৃত্তি, গান, অভিনয়ে জেলা পর্যায়ে বেশ নাম করেছে। তার স্পস্ট কথা বলা আর সাবলীল চলাফেরায় মুগ্ধ হয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত। ব্রাহ্মণ ধনী পরিবারের ছেলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, প্রেমার পরিবার তো মহা খুশী। কয়েক দিনের মধ্যেই ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ের পর দেখা গেল সুব্রতর আসল চেহারা। সে কথায় কথায় প্রেমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল। দিন যায় তার অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। এতো ধনী ঘরে বিয়ে হলেও প্রেমাকে দেখা হতো কাজের লোকের মতো। সারাদিন শুধু কাজ করাই যেন বউয়ের কাজ। বাড়ির কাজের লোক ছেড়ে দেওয়া হলো। কাজের পরে তাকে পেট ভরে খেতেও দেওয়া হতো না।
বর এতো ভালো বেতনের চাকরি করলেও প্রেমার কোনো প্রয়োজনই সে পূরণ করেনি। বাবার দেওয়া টাকায় প্রেমার হাত খরচ চালাতে হতো। পরিবাররের সবাইকে ডেকে সুব্রত জানতে চাইতো তারা প্রেমার কোনো আচরণে কষ্ট পেয়েছে না কি, তাদের উত্তরের ওপর প্রেমার ওপর চালানো হতো নির্যাতন। ১০৩ জ্বর নিয়ে সংসারের সব কাজ করতে হতো। একটু দেরি হলেই শুনতে হতো গালি গালাজ। এতো সব সহ্য করেও প্রেমা থাকতে চেয়েছিল সে বাড়ি। কিন্তু তাও হলো না। সুব্রত ছুটি শেষে চাকরিতে চলে যাওয়ার পর শাশুড়ি জানিয়ে দিলেন, প্রেমাকে আর তাদের প্রয়োজন নেই। সে বাবার বাড়ি চলে যাক।
প্রেমা এতো দিন বাবা মাকে কিছুই জানায়নি। বাবার বাড়ি এসে সে সব খুলে বললো। বাবা মা মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তারা চান প্রেমার সুব্রতর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাক। প্রেমা ডির্ভোস চায় না। কিন্তু সে এটা পরিবারকে বলতে পারছেনা। এদিকে বাবা মা এবং কাছের আত্মীয়রা প্রায়ই সংসার ভাঙ্গার জন্য প্রেমাকে দায়ী করে। প্রেমা অনেক কষ্ট পায়। সে দুঃখ করে বলে,‘আমি বুঝতে পারি না। এখন কী করবো? আগে সুব্রতর পরিবারের খারাপ ব্যবহারের কথা বাবা মা কে বলেছি। কিন্তু নিজের বাবা মায়ের কথা তো কাউকেই বলতে পারছি না’।
একদিকে দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি টানতে হচ্ছে সেই দুঃখবোধ আর অন্যদিকে পরিবার ও বন্ধুদের নানা কৌতুহলে প্রেমার জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
তবে প্রেমার এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে, এই বিরুপ পরিস্থিতির। জীবনকে একমুখী কিংবা এককেন্দ্রীক করে না দেখে সবসময়ই তাকাতে হবে সামনের দিকে। সত্য থেকে পালিয়ে না বেড়িয়ে যুক্তি দিয়ে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হতে হবে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে, মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরতে গেলে মনের অস্থিরতা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
আত্মীয় বা বন্ধুরা যদি জানতে চায় কেন এমন হলো, কোনো কিছু না লুকিয়ে পুরো বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে আর ঠাণ্ডা মাথায় তাদের বুঝিয়ে বলুন।
এসময় প্রেমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবারের সদস্যদের পাশে পাওয়া। একটি সম্পর্ক ভেঙ্গে যাক এটা কারও কাম্য নয়। তবে যে সম্পর্কে কোনো সম্মান থাকে না, তা জোর করে টিকিয়ে রাখা অর্থহীন। কষ্টের স্মৃতি পেছনে ফেলে প্রেমাকে এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর।