দিবা দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া শেষে পরিবারের পছন্দে ডাক্তার রাকিবকে বিয়ে করেছে ৬ মাস হচ্ছে।
রাকিবদের যৌথ পরিবার।
রাকিবের স্বচ্ছল পরিবারে দিবার কোনো কিছুর অভাব নেই তারপরও দিবা খুশি নয়। তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন শাশুড়ি। দিবা পরিবারের জন্য আগ্রহ নিয়ে কিছু রান্না করতে চাইলে প্রথমে অনুমতি নিতে হয় শাশুড়ির কাছে।
কোথাও যেতে হলেও একই অবস্থা। রাকিবের সঙ্গে বাইরে যাওয়া, বা বাইরে খাওয়া পছন্দ করেন না রাকিবের মা, তাই তাদের খুব একটা একসঙ্গে সময় কাটানোরও সময় হয় না।
দিবা রাকিবকে বুঝিয়ে বলে, দেখ আমারও তোমার জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে। কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে। মা আমাদের ব্যক্তিগত অনেক বিষয়েও কথা বলেন, কোথাও যেতে চাইলে বাধা দেন, আমি শিক্ষিত মেয়ে, আমার পরিবার অনেক স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছে আমাকে।
একটা ভালো চাকরি করে আমারও একটা ক্যারিয়ার তৈরি করা প্রয়োজন। তুমি আমাকে সাহায্য করো। পরিবারের সবাইকে বোঝাও।
উত্তরে রাকিব বলে, একটু মানিয়ে চলো। মা তো এমনই।
রাকিবের এমন জবাবে দিবা আর কিছু বলে না। সে কষ্ট পায়।
কয়েকদিন পর দিবা বাবার বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিয়ে মানসিক কষ্টে আছে বলে জানায়। বাবা, ভাই, বোন সবাই তাকে বোঝায়, রাকিবদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো।
তুমিই একটু মানিয়ে নাও। দিবা বুঝে উঠতে পারেনা, আসলে সমস্যা কার। অনেক আশা নিয়ে সে ঘর বেঁধেছে। অথচ তার ছোট ছোট স্বপ্নগুলোও পুরন হচ্ছে না।
দিবা দেখেছে তার পরিবারে ভাবীরা কতোটা স্বাধীনতা পেয়েছে। আর তার নিজের কী অবস্থা!
মানিয়ে চলার দায়িত্ব কি তাহলে শুধুই মেয়েদের? এমন অবস্থায় দিবার সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটা অনেকটাই ম্লান দেখায়। রাকিবের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। যার পরিণতি ভালো হয় না।
পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলে, মেয়েটির কাছে শ্বশুর বাড়ির পরিবেশ থাকে অচেনা, অজানা। এমনিতেই নতুন পরিবেশ তার ওপর মানসিক সার্পোট না পাওয়া ভেতরে ভেতরে মেয়েটি অসহায় বোধ করতে থাকে। যার ফলে সে এক সময় নিজের মতো চলতে চায়, চায় একটি ছোট সংসার। আর এভাবেই আমাদের দেশের যৌথ পরিবারগুলো টিকতে পারছেনা।
যৌথ পরিবারে থাকতে চাইলে সেখানে কিছু সমস্যা থাকবেই, তবে এটাকে মনে পুষে না রেখে মিটিয়ে ফেলাই ভালো। দাম্পত্য সম্পর্কে মান-অভিমান থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে অন্যের জন্য বা ছোট কোনো সমস্যাকে বড় করে দেখে নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্ক শীতল হতে দেওয়া ঠিক নয়। মানিয়ে চলার বিষয়টি কিন্তু খারাপ আইডিয়া নয়। সংসারে কিছুটা মানিয়ে চলতে পারলে সব সম্পর্কই সহজ, সুন্দর হয়।
লক্ষ্য রাখতে হবে, এটা যেন একতরফা না হয়। সংসার এবং সম্পর্ক দুজনের তাই মেনে নেওয়া এবং মানিয়ে চলার বিষয়টিও দুপক্ষের জন্যই হতে হবে। সঙ্গীর প্রতি সম্মান এবং তার চাওয়ার গুরুত্ব দিলেই আমরা পেতে পারি সুখী, সুন্দর ও স্বার্থক দাম্পত্য।
ছবি: প্রত্যয় আহমেদ
কোরিওগ্রাফি: আসাদ খান