আমরা এগিয়ে যাচ্ছি শিক্ষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতিতে। কিন্তু মানসিকতায়? একটি প্রশ্ন(?) যেন থেকেই যাচ্ছে।
অথচ শারীরিক কিছু ত্রুটি(হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গ) নিয়ে মিডিয়ায় কাজ করার সময় আমাদের আরও অনেক সহানুভূতিশীল হওয়া উচিৎ ছিল। আমাদের চেষ্টা থাকা প্রয়োজন তাদের সমাজে সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপনের। যা দেখে আমাদের মাঝে তাদের ভালো দিকগুলো সামনে আসে। ওরা তো আলাদা নয়, আমাদেরই একজন। তার কিছু ত্রুটিকে হাস্যকর করে নোংরা বিনোদনের যে খেলা, এতে আমাদের তথাকথিত সুস্থ মানুষদের অসুস্থ মানসিকতাই বেরিয়ে আসে।
অবাক লাগে যখন দেখি একজন হিজড়া রাস্তায় বের হলে শারীরিক(যৌন) নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যারা এমন হয়রানি করে, তাদের সুস্থ বলা কতোটা যৌক্তিক, জানা নেই। শুধু বলতে ইচ্ছা করে আমরা যারা সচেতন, সমাজের অসঙ্গতিগুলো নিয়ে যারা কাজ করি তাদের দায়িত্ব এই হিজড়াদের সুস্থ সামাজিক জীবন পেতে সাহায্য করা।
একটি পার্লারে পরিচয় হলো রিতার সঙ্গে। দেখতে অনেকটা ছেলেদের চেহারা কিন্তু তার কণ্ঠ ও সাজগোজ মেয়েদের মতো। অনেক কষ্ট নিয়ে রিতা জানালেন, বাজার করতে গেলে পুরুষগুলো তার শরীরের(স্পর্শকাতর) বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে আসল-নকল!
কিছুক্ষণ কথা বলতে বলতে যখন রিতা জানলেন আমি মিডিয়ায় কাজ করি, তখন কষ্টগুলো যেন রাগে-ক্ষোভে পরিণত হলো। তার কথায়-মিডিয়া তো আমাদের নিয়ে রসিকতা করে। আগে কতো পছন্দ করতাম(জনপ্রিয় একজন অভিনেতার নাম বলেন)। তার নাটক দেখলে টিভির সামনে বসে থাকতাম। সেও আমাদের নিয়ে এমন নাটক করলো। কেন? আমাদের কি ভালো কিছু নাই? আমরা কীভাবে চলি? কেউ কি আমাদের সঙ্গে কোনো দিন ভালো করে দুইটা কথা বলে? দেখলে ভয়ে দূরে চলে যায়, কেন আমরা কি মানুষকে তাড়া করি? আমাদের কেউ কাজ দেয়? আমরা কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব? আপন ভাই-বোনরাও তো আমাদের পরিচয় দেয় না।
রিতার এই ক্ষোভগুলো অমূলক নয়। তার অনেক কথার কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। তাই একসময় মাথা নিচু করেই বেরিয়ে এলাম।
কিন্তু মাথা থেকে রিতার কথাগুলো যাচ্ছিল না। তাই স্বপ্ন দেখি, এমন একটা সমাজ আমরা সবাই মিলে একদিন গড়ে তুলবো, যেখানে রিতারাও আমাদের পাশে বসে কাজ করবে। একসাথে হেসে খেলে পরিবারে বড় হবে।