সোনিয়া একটি মাল্টিন্যাশনাল অফিসে কাজ করে। গত কিছুদিন ধরে কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছেন না সোনিয়া।
শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় মানসিক এই অবস্থার প্রভাব পড়ছে পরিবারেও। সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তার অবস্থাও সোনিয়ার মতোই। আসলে আমাদের প্রথম প্রয়োজন নিজেদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা মেডিটেশন করতে পারি।
আমরা জানি পৃথিবীর সব বড় বড় বিপ্লবের সূচনা হয়েছে মৌনতার মাঝে মনের ধ্যানাবস্থায়। দুনিয়ায় মানুষের তৈরি দৃশ্যমান সবকিছুই প্রথম বাস্তবতা লাভ করেছে মনে। তবে এ বিষয়টি আমরা অতোটা গুরুত্ব দিয়ে মানিনা।
আমাদের যান্ত্রিক-জীবনে একটু শান্তি মতো নিশ্বাস নেওয়ারও সময় নেই। জীবনের সফলতার এই দৌড়ে কখনও কখনও হাঁপিয়ে উঠি। আবার বিভিন্ন কারণে মন অস্থির থাকে। চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময় ভুল হয়। জীবনে যে কোনো বিষয়ে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন দূরদর্শীতা, ধৈর্য। আর এটা আমরা পেতে পারি ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে।
আমাদের মহানবী(স:) দীর্ঘ দিন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন, সব ধর্মপ্রবর্তক, লেখক, সাহিত্যিক, জোত্যির্বিদ ধ্যান করেছেন।
এসময়ে এসে বছরের পর বছর গাছের তলায় হয়তো ধ্যান করার সময় নেই। তবে দিনের কিছুটা সময় হোক মাত্র ১৫ মিনিট, মেডিটেশন করতে পারলে আমাদের বিক্ষুব্ধ মন শান্ত হবে।
মেডিটেশন আমাদের ক্লান্তি, অবসাদ এবং খেয়ালী মনের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। মেডিটেশন করতে চাইলে প্রথমে মন ঠিক করতে হবে। এটা খুবই সহজ ও সাধারণ একটি বিষয় এর জন্য বাড়তি কোনো আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই।
মেডিটেশনের ওপর কিছু বই, সিডি বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিলে সঠিক নিয়মে মেডিটেশন করতে পারবেন। আমাদের দেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা, কয়েক দিনের মেডিটেশনের কোর্স করায়। ইচ্ছা করলে, সামর্থ থাকলে এবং সময় পেলে এই কোর্স করে নিতে পারেন।
শরীর সুস্থ রাখতে এবং মানসিক প্রশান্তি পেতে মেডিটেশন করতে পারি। খুব সহজে ঘরে যা করতে হবে:
- মেডিটেশনের জন্য একটা খোলা জায়গা নির্বাচন করুন
- বাগান, বারান্দা খোলা ছাদ বা বড় জানালা দেওয়া বড় ঘরেও মেডিটেশন করতে পারেন
- নির্দিষ্ট স্থানে একটা মাদুর পাতুন বা বিছানা করে নিন
- ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরুন
- মেডিটেশনের সময় যাবতীয় কাজ এবং ব্যস্ততাকে দূরে রাখুন
- মোবাইল ফোন বন্ধ করুন, মেডিটেশনের সময় ফোন এলে মনোসংযোগ নষ্ট হবে
- পদ্মাসনে বসুন অথবা যেভাবে বসতে আরামবোধ করেন, সেভাবেই বসতে পারেন
- অবশ্যই মেরুদণ্ড সোজা রাখুন
- ধীরে ধীরে ও গভীর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যাবতীয় জাগতিক চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন
- মনোসংযোগ করে চিন্তাকে একটি স্থির অবস্থায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করুন
- সুন্দর কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা ভাবতে পারেন
- প্রথম দিন থেকেই আপনার মন পুরোপুরি ধ্যানে মগ্ন নাও হতে পারে, ধৈর্য হারাবেন না
- নিয়মিত কয়েকদিন চেষ্টা করুন
- মন আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে
নিয়মিত মেডিটেশনে আমাদের আত্মবিশ্বাস, কর্মদক্ষতা ও মনোযোগ বাড়ে।
সুগন্ধি মোমবাতি বা ধূপ জ্বালিয়ে বেশ আয়োজন করেও মেডিটেশন করতে পারেন।
মেডিটেশন করলে শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে, এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, হতাশা, পিরিয়ডের আগের ব্যথা, অস্বস্তি, মাথাব্যথা কমাতে দারুণ কার্যকর।
মনে রাখবেন, মেডিটেশন কোনো ম্যাজিক নয়। ধীরে ধীরে পরিশ্রমের মাধ্যমে সব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হয়। মেডিটেশন আমাদের চলার পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সাহায্য করে।