ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

বিশেষ শিশু, সাধারণ শিক্ষা- স্বপ্নের পথে হাঁটা

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৬
বিশেষ শিশু, সাধারণ শিক্ষা- স্বপ্নের পথে হাঁটা

বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিদ্যালয় বা স্কুল আমাদের শুধুমাত্র শিক্ষার মূল্যায়নই নয় বরং অনেক বিষয়ে দক্ষ, নিয়মানুবর্তী ও দায়িত্বশীল হতে শেখায়।

আমাদের ছোটবেলার স্কুলের শ্রেণিকক্ষের কথা যদি একবার কল্পনা করি, তবে কী দেখতে পাই?

একটি শ্রেণীকক্ষে ৩০-৪৫ জন শিক্ষার্থী, ১ জন শিক্ষক, অনেক অনেক লেখার কাজ, পড়ার কাজ, শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর, পরীক্ষা ইত্যাদি ও প্রচ- প্রতিযোগিতা। আমাদের অনেকেই হয়তো এই প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়ে এসেছি। কিন্তু অনেকেই স্বাভাবিক দৃষ্টি, শ্রবণ আর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়েও এই প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়াদের দলে পড়েছি।

তাহলে সেইসব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের একবার চিন্তা করি, যারা ভাষার বিকাশে পিছিয়ে আছে, যারা অতি চঞ্চল, যার সামাজিক আচরণের দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে; যে কিনা কোনো নির্দেশনা অনুসরণ করে না, তাদের জন্য গতানুগতিক একটি শ্রেণিকক্ষ কি আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ নয়? যে শিশুটি পেন্সিল ধরে না, তার জন্য প্রতিদিনের শ্রেণিকক্ষের লেখার কাজ, আর লিখিত মূল্যায়ণপত্র অনেক বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের উপযোগী শ্রেণিকক্ষ, প্রশিক্ষক, মূল্যায়ণ পদ্ধতি ইত্যাদি একটি শিশুর অধিকার। একটি উন্নয়ণশীল জাতি হিসেবে আমরা যত দেরি করবো এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ততই সম্ভাবনার দ্বার থেকে পিছিয়ে যেতে থাকবো, আর হারাতে থাকবো অনেক প্রতিভা। অটিজম বা অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরকে বুঝতে না পারা এবং তার প্রয়োজনকে মূল্যায়ন না করা তার প্রতি অন্যায় করার শামিল।

বিগত ৯ বছর ধরে আমি অটিজম এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের রোগ নির্ণয়, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, স্পেশাল শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছি। কাজ করতে গিয়ে আমি বাংলাদেশে ভিন্ন প্রেক্ষাপট দেখেছি। যদিও সরকারের গৃহীত ‘সকল শিশুর জন্য শিক্ষা’ আইনটি সব শিশুদের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন এই যে- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা এতে কতটুকু লাভবান হচ্ছে?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা অন্যান্য শিশুদের মতোই একই গেইট দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করলেও স্কুলে ভিতরে তাদের ভিন্ন শ্রেণিকক্ষে বসতে হচ্ছে। কারও কারও ওপরের ক্লাসে প্রোমোশন হচ্ছে একাডেমিক উন্নয়ন ছাড়াই, অথবা কোনো কোনো শিশু সাধারণ স্কুলে পড়ার জন্য স্কুলের পর স্কুল পরিবর্তন করছে। কোনো শিশু বিনা নোটিশে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে, অথবা কেউ ক্লাসে শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া সিট ছেড়ে উঠবার জন্য শাস্তি পাচ্ছে। কিছু শিশুর বেলায় তো এমনটি ঘটছে যে কোনো স্কুলই তাকে ভর্তি নিচ্ছে না কারণ কোন শিক্ষকই তাকে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহী নন। স্কুলের পাঠ্যক্রম, শিক্ষকের আচরণ, অসহযোগিতা কিংবা স্কুলে বা পরিবারের অতিরিক্ত চাপের সাথে প্রতিনিয়ত খাপ খাওয়াতে অনেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই চিত্রগুলি যদি কিছুটা পরিবর্তন করা যায় আমার বিশ্বাস এই অবহেলিত শিশুরাও তাদের সকল সীমাবদ্ধতাকে পেড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। নিজের যোগ্যতা দিয়ে সমাজের উন্নয়নের মূলধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।

পজিটিভ থিংকিং এ আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রত্যেক শিশুর মাঝেই সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেক শিশুই শিখতে পারে- কিন্তু শিক্ষা পদ্ধতিতে আনতে হবে ভিন্নতা।

একটি শ্রেণীকক্ষে থাকতে হলে শিশুদের যেসব দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়-
•    যোগাযোগের দক্ষতা
•    ভাষাগত এবং
•    ইশারা
•    প্রাক – প্রাথমিক দক্ষতা
•    অঙ্গ সঞ্চালনের দক্ষতা
•    ক্ষুদ্র অঙ্গ সঞ্চালনের দক্ষতা। যেমন: পেন্সিল ধরা, তুলি ধরা ইত্যাদি।
•    বড় ধরণের অঙ্গ সঞ্জালনের দক্ষতা। যেমন: খেলাধূলা করা।
•    ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়গত দক্ষতা
•    দৃষ্টিগত দক্ষতা
•    শ্রবণের দক্ষতা
•    মনোযোগের দক্ষতা
•    দীর্ঘমেয়াদী
•    স্বল্পমেয়াদী
•    সামাজিক দক্ষতা
•    আদান প্রদান মূলক আচরণ
শ্রেণীকক্ষের আচরণ। যেমন: শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করা, প্রশ্নের উত্তর দেয়া ইত্যাদি।
অগ্রহণযোগ্য আচরণ না থাকা। যেমন: অযথা চিৎকার করা, থুথু ছিটানো, সিটে না বসা ইত্যাদি।
আমাদের স্বপ্নের পথে পথ চলা সহজ নয়,  আমরা জানি, কিন্তু তা অসম্ভবও নয়।
লেখক: নুরুন্নাহার নুপুর

ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পজেটিভ থিংকিং- সার্ভিসেস ফর স্পেশাল নিডস চিলড্রেন
যোগাযোগঃ অটিজম বিডি ( http://www.autismbd.com )
ফোন: ০১৯৩১৪০৫৯৮৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।