তবে, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের ভেতরে বেশ কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন আসে। আর এতে মূল ভূমিকা রাখে কয়েক ধরনের হরমোন।
আসুন জানি কোন হরমোনের ফলে আমাদের জীবনে এতো বড় পরিবর্তন এনে দেয়:
লালসা: শুনতে যেমনই শোনা যাক, প্রেমে পড়ার শুরুতে লালসা’ই প্রথম ভুমিকা পালন করে। এজন্য অবশ্য কাউকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। কারণ, দোষ হলে তা টেস্টোষ্টেরন আর অস্ট্রোজেন নামের দুটি লালসা জাগানিয়া হরমোনের দোষ। এই দুটি হরমোন মানুষকে এমনভাবে তাড়িত করে যে বলা হয়, এই হরমোন দুটির প্রভাবে প্রেমে পড়লে একেবারে মরিয়া আচরণ পর্যন্ত করতে পারে কেউ কেউ।
আকর্ষণ: এটা প্রেমে পড়ার দ্বিতীয় ধাপ। লালসা’র কারণে এই পরের ধাপে মানুষ একজন অপরজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে। বলা হয়, এটাই প্রেমের প্রকৃত ধাপ। এই ধাপে পৌঁছালে মানুষ পছন্দের মানুষটি ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারে না। খাওয়া-ঘুমানোও নাকি ভুলে যায়। এ পর্যায়ে নেতৃত্বে চলে আসে,‘মনোয়ামাইন’ নামে একগুচ্ছ স্নায়ুকোষ। এর একটি হলো, ডোপামাইন। অবাক ব্যাপার হলো, কোকেন বা নিকোটিন নিলে এই স্নায়ুকোষ যেমন সাড়া দেয়, প্রেমের অনুভতিতেও ঠিক একইভাবে সাড়া দেয়। এরপর বলাই যেতে পারে যে, প্রেমে পড়াটা এক ধরনের নেশায় আসক্ত হওয়ার মতো। আকর্ষণের এই ধাপে এসে ‘সেরোটোনিন’ নামের এক রাসায়নিক উপাদানের কথা না বললেই নয়। কারণ, এটি প্রেমে আসক্ত কাউকে সাময়িকভাবে প্রকৃত অর্থেই পাগল বানায়।
সম্পৃক্ততা: এটাকে বলা হচ্ছে, সম্পর্কের উচ্চতর ধাপ। এই ধাপেই নির্ধারিত হয় সম্পর্কের স্থায়ীত্ব। কারণ, প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ কখনোই শুধু আকর্ষণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এই পর্যায়ে পৌঁছালেই মানুষ বিয়ে থেকে শুরু করে সংসার পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে।
এতকিছু জানার পর, প্রেম বা ভালোবাসা হরমোনের খেলা এমনটা মনে হতেই পারে। তবে, এখানেই ইতি টানা শেষ হবে না। কারণ মানুষ কখনো কখনো জিন দ্বারাও প্রভাবিত হয়। যেমন, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কাউকে যদি এমন চিন্তা করতে দেখেন যে, নির্দিষ্ট মানুষের সাথে তার সম্পর্ক হলে পরবর্তী প্রজন্ম কেমন হবে, তাহলে বুঝবেন এক্ষেত্রে জিন দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন।
প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই চেহারা বেশি গুরুত্ব পায়। ভূমিকা রয়েছে গন্ধেরও। তবে এসবের মধ্যে দিয়ে মানুষ আসলে নিজের অজান্তে তেমন মানুষই খোঁজে যারা দেখতে বা গন্ধের দিক দিয়ে বাবা-মা’র মতো।
চমকে ওঠার মতো একটা কথা বলে এই আলোচনা শেষ করি। সেটা হলো, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রেমে পড়লে মানুষের মাথা বা ব্রেন যেভাবে কাজ করে, যেকোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতার শুরুর দিকে মাথা বা ব্রেন একই রকম কাজ করে।
লেখক: মুনজুরুল করিম