ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

করোনা কালে মায়ের ভালোবাসায় প্রতিদিন দেড়’শ এতিম শিশুর খাবার

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
করোনা কালে মায়ের ভালোবাসায় প্রতিদিন দেড়’শ এতিম শিশুর খাবার এতিম শিশুদের মাঝে আবীর

প্রতিদিন ১৫০ জন এতিম শিশুর এক বেলার খাবার মুখে তুলে দেন ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক মা। সকাল থেকে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। আবীর আহমেদ খান ও আলভী আহমেদ খান দুই ছেলেকে নিয়ে মা ফরিদা ইয়াসমিন করোনার এই সময়ে প্রথম রোজা থেকে চালিয়ে আসছেন এই মহৎ উদ্যোগ। 

ভিন্ন ভিন্ন মেন্যু আয়োজন করে থাকেন তিনি। কোনো দিন ভাত, কোনো দিন খিচুড়ি আবার কখনো বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের জন্য দুধ চিড়া কলার এসবের আয়োজন করে থাকেন।

 

সকাল ছয়টা বাজতে না বাজতেই দু’ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে, লিস্ট দিয়ে বাজারে পাঠান। বাজার আসতেই শুরু হয় তদারকি, সবগুলো বাজার ঠিকমতো এলো কিনা। খাবারের স্বাদে কোনোভাবেই কম হওয়া চলবে না।  

প্রতিদিন দেড়শ মানুষের আয়োজন করেন তারা।  ঠিক যেমন ভালোবাসা নিয়ে নিজের সন্তান আলভী-আবীরের জন্য রান্না করেন পছন্দের খাবার। সেভাবেই পরম যত্নে এতিম বাচ্চা এবং বৃদ্ধ মায়েদের জন্যও রান্না করেন ফরিদা ইয়াসমিন।  

একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ম্যানেজার আবীর বলেন, ছোটবেলা থেকেই মা শিখিয়েছেন, অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর করোনা সংক্রমণের ভয়ে সবাই যখন ঘরে রয়েছে, তখন অনেকেই থাকছেন চরম কষ্টে, অনাহারে। রোজার মাসটি যেহেতু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিমদের কাছে, তাই মা চেয়েছেন, এই পুরো মাস সাধ্যমতো খাবারের ব্যবস্থা যেন আমরা করি অসহায় মানুষের জন্য।  

এই আয়োজনের প্রায় সব কাজ তিনি নিজের হাতেই করেন। যেদিন আমাদের ডিম ভাজার মেন্যু থাকে সেদিন মা চুলায় দেড়’শো পিস ডিম ভাজেন। তখন রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসার পর মায়ের মুখের দিকে আর তাকানো যায় না। তার মুখ পুরো লাল হয়ে থাকে। এজন্য  তাকে সন্তানরা সেদ্ধ ডিম দিতে বলেন অনেক সময়, কিন্তু ফরিদা ইয়াসমিন কষ্ট হলেও ডিম ভেজেই দেন আর বলেন, এই ডিমটা তেল, পেঁয়াজ, মরিচ-লবণ দিয়ে ভাজার পরে অন্যরকম একটা স্বাদ হয়। ওরা খেয়ে তৃপ্তি পাবে।


ফরিদা ইয়াসমিন দুপুরের মধ্যেই রান্না শেষ হয়ে করে, প্যাকিং করতে বসে যান ছেলে এবং ছেলের বউ সারাবান তাহুরাকে নিয়ে। পরম যত্নে প্রতিটি প্যাকেটে সমানভাবে খাবার যাচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন। প্রতিদিনের প্যাকিং যখন শেষে প্রতিটি খাবারের প্যাকেট ছেলেদের গাড়িতে তুলে দেন তিনি।  

খাবার নিয়ে আবীর-আলভী ছুঁটে যান উত্তরা এলাকার অসহায়, এতিম শিশুদের মাঝে। অসহায় শিশুগুলো খাবার পেয়ে যে খুশি হয়, তা দেখে সারা দিনের পরিশ্রমের কথা ভুলে যান তারা।  


সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য তাদের এই ভালোবাসা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক বন্ধু ও পরিচিতরাও নিজেদের এলাকায় ‘রাইজিং স্টার চ্যারিটি বাংলাদেশ’ নামে একত্রিত হয়ে, নিজেরা টাকা তুলে এতিম শিশুদের খাবার দিচ্ছেন বলেও জানান আবীর।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।