যার দাঁত উঁচু, সে মানুষের সামনে প্রাণখুলে হাঁসতে পারবে না, সুডোল দেহ সৌন্দর্য না থাকলে সে মনের মতো পোশাক পরবে না? মোটা মেয়েরা শাড়ি পরতে পারবে না? শুকনা ছেলেরা জিন্স? কেন! কারণ অনেকেরই এমন মানুষদের দেখতে ভালো লাগে না। বেশ, ভালো না লাগতেই পারে।
আমরা অনেকেই ভুলে যাই শারীরিক সৌন্দর্য অনেকটাই আমাদের নিজেদের হাতে থাকে না। একটা মানুষ লম্বা হবে না বেঁটে এটা ঠিক হয় জিন থেকে।
অথচ সেই বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়েই অনেক মানুষকে হীনমন্যতায় ভুগতে হয়। আমাদের মতোই আরেকজন মানুষের কথায়।
কাউকে হয়তো মজা করেই শরীরের নানা দিক নিয়ে এসব কথা হাসি-ঠাট্টার ছলেই বলা হয় সিরিয়াস কিছু না ভেবেই।
তবে যাকে বলা হয়, তার জন্য বিষয়টা কতটা অপমানের এটা কি বোঝার চেষ্টা করেছি কখনো?
ফিগার সচেতনতার নামে আধুনিক সমাজে অন্যকে হেয় করার যেন এক ধরনের বাজে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
বন্ধু-আত্মীয়-কলিগ বা প্রিয় লেখক, যেই হোক এভাবে হেয় করে কথা বললে কখনোই তিনি প্রিয় থাকতে পারেন না। এই বোধটাও খুব জরুরি। আর যাকে প্রতিনিয়ত কথাগুলো বলা হয়, তার জন্য এটা অপমানজনক, এতে করে দেখা দিতে পারে হতাশা তিনি ভুগতে পারেন হীনমন্যতায়।
বডি শেমিং করে অনেকেই চান প্রিয়জনের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনতে। কিন্তু মানুষকে অপমান করে কি শোধরানো সম্ভব? এসব করে তার তো লাভ খুব একটা হয় না। বরং বডি শেমিং-এর শিকার হয়ে তিনি অনেক সময় জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। যার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই আমেরিকাতে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন চেহারা সুন্দর করতে এবং স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি করতে। এরসঙ্গে ছেলেদের জন্য রয়েছে সিক্সপ্যাক ফিগার, মেয়েদের বিজ্ঞাপনের মডেলের মতো স্কিন, কালার, ফিগার।
কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন, বিজ্ঞাপনে যে ছবিগুলো আমরা দেখি, তা প্রথমে কয়েকঘণ্টায় মডেলকে মেকআপ করা হয়। অনেক লাইটের ব্যবহার হয় ছবি তোলার সময়। ছবি তোলেন দেশের নামকরা ফটোগ্রাফাররা, এরপর হয় আসল কাজ, মানে শত শত ছবির ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয় মাত্র কয়েকটি, এগুলোকে এডিট করা হয় যত্ন নিয়ে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে। এবার বলেন কতটুকু আসল সৌন্দর্য আমরা দেখি?
অন্যের কথায় কান দেওয়ার কিছু নেই, নিজেকে ভালো বাসুন। পৃথিবীর সবাই সুন্দর-মানুষের আসল সৌন্দর্য তার মনে। আর সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে তার আচরণে-কাজে।
আর যারা বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে এধরনের মন্তব্য করে আঘাত করে, সচেতনভাবেই তাদের এড়িয়ে চলুন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
এসআইএস