লন্ডন: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে একটি জয়ের খবরের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানার মেয়ে লেবার দলীয় প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিকের জয়ের খবরের পাশাপাশি রুশনারা আলী, রুপা হকসহ অন্যান্য বাঙালি বংশোদ্ভুত প্রার্থীদের খবরের জন্যও ছিল প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষা।
ঐদিন ছিল প্রধানমন্ত্রীর সিরাজগঞ্জ সফরের শিডিউল। সফরের উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টারে ওঠার আগ পর্যন্ত ঘন ঘন খবর নিয়েছেন, কিন্তু তখনও লন্ডনে ভোট গণনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত উড়ন্ত হেলিকপ্টারেই সেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের খবরটি পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উড়ন্ত হেলিকপ্টারে টিউলিপের হাউস অব কমন্স জয়ের প্রধানমন্ত্রীর এই খবর পাওয়ার তথ্যটি বাংলানিউজকে জানান টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা।
ভোট গণনা কেন্দ্র কেমডেন সমার্স টাউন সেন্টারের বাইরে অপেক্ষমান বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে তাদের কাঙিক্ষত বিজয়ের খবরটি যখন পৌঁছে তখন স্থানীয় সময় ভোর ৫টা। বাংলাদেশে সকাল ১০টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন উড়ন্ত হেলিকপ্টারে সিরাজগঞ্জের পথে।
এর আগেই অবশ্য কেন্দ্রের ভেতর দায়িত্বরত সাংবাদিকসহ সবাই বুঝে গেছেন যে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার টিউলিপই হাঁটছেন বিজয়ের পথে। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীদের ব্যালট পেপারগুলো ভিন্ন ভিন্ন রঙের কাগজে মোড়ে গণনা কেন্দ্রের টেবিলে রাখা ছিল। লেবার দলীয় প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যালটগুলো ছিল লাল রঙের কাগজে মোড়ানো।
টেবিলে লাল রঙের বান্ডেলগুলোর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিউলিপের জয়ের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। ফলাফল ঘোষণার আগে রিটার্নিং অফিসার যখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের নির্ধারিত স্থানে জড়ো হওয়ার অনুরোধ জানালেন ফলাফল ঘোষণার সময় যে উপস্থিত, তখনই সবাই বুঝে গেছেন। সাংবাদিকসহ সবার দৃষ্টি যখন রিটার্নিং অফিসারের দিকে বাংলানিউজ তখন পর্যবেক্ষণ করছে শেখ রেহানা ও টিউলিপের গতিবিধি।
এ সময় দেখা যায় উৎফুল্ল শেখ রেহানা কার সঙ্গে যেন আবেগাপ্লুত হয়ে মোবাইলে কথা বলছেন। সঙ্গে সঙ্গেই দূর থেকে মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করা হয় দৃশ্যটি। কয়েক সেকেন্ড কথা বলেই রেহানা টিউলিপের হাতে দিয়ে দেন মোবাইলটি, কথা বলতে বলতে টিউলিপও তখন আবেগাপ্লুত। এর পরপরই আসে সেই কাঙিক্ষত বিজয়ের ঘোষণা।
রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনরত কেমডেন কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার লাজ্জারো পিয়েটরাগনলি (Clr Lazzaro Pietragnoli) সর্বনিম্ন ভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের থেকে শুরু করেন ফলাফল ঘোষণা। বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন টিউলিপের নাম। ২৩৯৭৭ ভোট পেয়ে টিউলিপ হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, এই ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়েন হলের ভেতরে অবস্থানরত টিউলিপের নির্বাচনী এজেন্টসহ বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকরা। খুশিতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রী টিউলিপের বিজয় খবরটি প্রথম কখন পেয়েছিলেন, বাংলানিউজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নে স্থানীয় সময় শনিবার (০৯ মে) এক কথোপকথনে টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এই প্রতিবেদককে জানান, উড়ন্ত হেলিকপ্টারেই প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোনে খবরটি দেন তিনি।
শেক রেহানা বলেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকেই আপা (শেখ হাসিনা) বার বার খবর নিচ্ছিলেন। গণণা কেন্দ্রে আসার পরও ফোন করে খবর নিয়েছেন। টিউলিপের হাউস অব কমন্স জয়ের সেই কাঙিক্ষত খবরটি আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার কয়েক মিনিট আগেই প্রধানমন্ত্রীকে তিনি দিয়েছেন, এমন তথ্য দিয়ে শেখ রেহানা বাংলানিউজকে বলেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মিনিট দশেক আগেই যখন প্রতিদ্বন্দ্বী টোরি দলীয় প্রার্থী সায়মন মারকাজ এসে কনগ্রেচুলেশন বলে টিউলিপের সঙ্গে হাত মেলায়, তখনই আমি বুঝে গেলাম আমার ‘পিচ্চি মেয়েটা’ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি হয়েই গেছে।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম আপাকে, আপা তখন উড়ন্ত হেলিকপ্টারে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নতুন আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টির সেই কাঙ্ক্ষিত খবরটি দিলাম তাকে। রেহানা বলেন, খবরটি পেয়ে কয়েক সেকেন্ড খুশিতে কথাই বলতে পারেননি আপা। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটি টিউলিপকে দিয়ে দিলাম আমি। অন্তত টিউলিপের কণ্ঠটি শুনুক। টিউলিপও কথা বলল, তিনি (শেখ হাসিনা) তাকে (টিউলিপ) অভিনন্দন জানালেন।
রেহানা বলেন, আলাপের এক পরযায়ে আপা রুশনারা, রূপাসহ অন্যদের খবর জানতে চেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, অন্যদের খবর কি? আমি রুশনারা ও রূপার জয়ের খবরও দিলাম তাকে। এই আলাপ শেষ হতে না হতেই রিটার্নিং অফিসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অংশ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
জেডএস
** টিউলিপের জয়ে ভূমিকা রাখায় শেখ রেহানার কৃতজ্ঞতা