লন্ডন: ব্রিটেনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নবনির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি ড. রূপা হক।
শনিবার (০৬ জুন) পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে মধ্যাহ্নভোজের ফাঁকে ফাঁকে বাংলানিউজের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।
নিজে নতুন এমপি হয়েছেন, পার্লামেন্টারি সিস্টেমের অনেক কিছুই তার জানার বাকি, এমন সরল স্বীকারোক্তি করে রূপা বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র আমি এমপি হলাম, অনেক কিছু শিখতে হবে। রোশনারা আমাদের সিনিয়র এমপি, তার অভিজ্ঞতা নিয়ে টিউলিপসহ অন্যান্য লেবার পার্টির এমপিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।
রূপার মতে, নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ ব্রিটেনের জনগণের পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণেরও একটি অধিকার রয়েছে তিনিসহ অন্য দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপির উপর। আর এ অধিকারের জোরেই বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পার্লামেন্টে কাজ করতে চান তারা।
নবনির্বাচিত এ এমপির মতে, ব্রিটেন-বাংলাদেশ পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট। এ সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক ভিত্তিও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রায় দুইশো বছরের ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে এখন পর্যন্ত দুই ভূখণ্ডের জনগণের মধ্যে নিজ নিজ ভাব বিনিময়ে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেটিই এ ঐতিহাসিক ভিত্তি বলে মনে করেন রূপা।
ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ সোসাইটিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে রূপা বলেন, ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার বাংলাদেশি ব্রিটিশদের জন্মভূখণ্ড বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ ব্রিটেন। পারস্পরিক এ আদান-প্রদানের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলেই আমাদের সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিতটি খুঁজে পাওয়া যায়।
তিন ব্রিটিশ বাঙালি এমপি ব্রিটেন-বাংলাদেশের নতুন সেতুবন্ধন, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ব্রিটিশ এমপি, ব্রিটেন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। এরপরও আমাদের শেকড় যে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে বাংলাদেশে, এটি তো কেউ অস্বীকার করতে পারে না। আর তাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিন এমপি দু’দেশের সেতুবন্ধন, এমনটিই মনে করা উচিত।
বাংলাদেশের জন্য ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণ আরও বাড়ুক এটি যেমন চান, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থে সংগৃহীত এ তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহৃত হোক বাংলাদেশের উন্নয়নে, এমনটিও চান রূপা।
আর এক্ষেত্রে সুযোগ থাকলে ভূমিকা রাখতেও আগ্রহী তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়ার সময় তার নির্বাচনী এলাকার জনগণসহ লন্ডন, বাংলাদেশ, সারা ব্রিটেন ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ইতিবাচক ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রূপা।
তিনি বলেন, আমি জানি আমার নির্বাচনী এলাকার সমর্থক ও ভোটাররা যেমন বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন বিজয় ছিনিয়ে আনতে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাঙালিরাও নিজেদের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিজয়ের প্রার্থনা জানিয়ে আমাদের পাশে ছিলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
সবার প্রতি তার এ কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দিতে বাংলানিউজের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। নিজ সমর্থকদের আবেগ, অনুভূতি ও সমর্থন দায়িত্ব পালনে অবশ্যই তাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে, এমনটাই মনে করেন রূপা।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আরও অধিক বাংলাদেশি এমপি চান, এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে রূপা বলেন, আমি প্রথমবার নির্বাচন করেই এমপি হইনি, লেগে থাকতে হয়েছে। জনগণের পাশাপাশি হাঁটতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। সাফল্য রাতারাতি আসে না, এই সত্য মেনে নিয়েই মূলধারার রাজনীতিতে বর্তমান প্রজন্মের বাংলাদেশিরা আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হবেন, এ আশাবাদ আমাদের। আমাদের সংখ্যা যত বাড়বে, কাজ করার সুযোগও তত বেশি সৃষ্টি হবে।
কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. রুপা হক সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাকটন আসনের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন।
এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও, ওইসময় নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি। ১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রুপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন।
ভিডিও লিংক:
বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
এসএস