লন্ডন: রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের বিরামহীন ব্যস্ততা থেকে একটু বিশ্রাম, বোনের সঙ্গে একান্তে কিছুটা সময় কাটানো বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে একান্তে ভাগনী টিউলিপের সাম্প্রতিক বিজয় আনন্দ ভাগাভাগি করা। এর কোনো কিছুই শতভাগ করতে পারছেন না লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রীর পরিচয় আড়ালে রেখে কোনোভাবেই তিনি মা বা বোন হয়ে ব্যক্তিগত এই সফরের সময়টি পার করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় লন্ডনের হোটেল হিল্টন অন পার্কলেনের লবিতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের অব্যাহত উপস্থিতি কোনোভাবেই তাকে শতভাগ বিশ্রামের সুযোগ দিচ্ছেনা।
নেতাকর্মীদের কেউ ক্ষণিকের জন্য হলেও নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান, এমন খবর যখন প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছে, তখন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরাও বাধ সেধে দলীয় কর্মীদের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত করতে পারছেনা নেত্রীকে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ জুন) সকালে ঘুম থেকেই উঠেই শারিরীক চেকআপের জন্য আবারও ডাক্তারের কাছে যান প্রধানমন্ত্রী। চেকআপ শেষে হোটেলে এসে সারাদিনই বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করেছেন তিনি।
বিকেলে কথা বলেন ভাগনী টিউলিপের নির্বাচনী প্রচারে নির্ঘুম রাত কাটানো কয়েকজন দলীয় কর্মীর সঙ্গে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনার যুক্তরাজ্য যুবলীগ সভাপতি ফখরুল ইসলাম মধু, যুগ্ম সম্পাদক জামাল খান, যুবলীগ নেতা মতচ্ছির চৌধুরী জনি ও আলী আকবর চৌধুরী মুহিদসহ আরও কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে টিউলিপের নির্বাচনে তাদের বিরামহীন পরিশ্রমের কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী তখন আপন মমতায় তাদের সঙ্গে কথা বলেন অনেক্ষণ। মতচ্ছির চৌধুরী জনি বাংলানিউজকে বলেন, এত মমতায় প্রধানমন্ত্রী যে আমাদের পাশে বসাবেন, কথা বলবেন আমরা কল্পনাই করিনি।
তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিজয়ে আমাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তোমাদের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফলই তোমরা পেয়েছো, টিউলিপকে এমপি হিসেবে পেয়ে’। জনি বলেন, ঐ সময় হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী মজা করে আমাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্যাম্পেইনের জন্য তোমাদের দেশে নিয়ে যাবো।
তাদের সঙ্গে দেখা করার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাসগুপ্তের নেতৃত্বে দলীয় কর্মীদের আরও একটি গ্রুপ। অনিল দাশগুপ্ত ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক ছিটমহল চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালে এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশ ও জাতীকে কিছু দেয়, এর সর্বশেষ উদাহরণ ছিটমহল চুক্তি। দীর্ঘ একচল্লিশ বছর পর হলেও এই চুক্তি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন দলীয় নেতাদের কাছে।
এ সময় তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো সম্পর্কে দেশের বাইরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জানাতে হবে, এক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে বসবাসরত দলীয় নেতাকর্মীরা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নেতাকর্মীদের সাক্ষাত দেওয়ার পাশাপাশি শনিবার প্রায় সারাদিনই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটান প্রধানমন্ত্রী। এ মুহূর্তে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাই উপস্থিত লন্ডনে। রোববার (১৪ জুন) জয়েরও লন্ডন এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।
এদিকে, রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাঙালি বংশোদ্ভুত তিন এমপি রোশানারা আলী, ড. রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিকেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ। তিন এমপি রোশানারা আলী, ড. রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক অনুষ্ঠানে আসছেন কি-না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান শরীফ বলেন, আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং আশা করছি তারা উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
জেডএস