লন্ডন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাতনী, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নবনির্বাচিত লেবার দলীয় এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থামছেই না। নির্বাচনে তার বিজয় রুখতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নয়, উঠেপড়ে যেমন লেগেছিল টিউলিপেরই স্বজাতির কিছু মানুষ, ঠিক তেমনি এখনও তাকে ঘায়েল করতে নিরন্তর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই গ্রুপটিই।
পার্লামেন্টে টিউলিপের প্রথম হৃদয়কাড়া বক্তব্যের পর সব মহলে যখন এটি প্রশংসিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই নতুন করে তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টায় মত্ত হয়েছে ওই গ্রুপটি। আর এবার তাদের টার্গেট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলীর সঙ্গে টিউলিপের দূরত্ব সৃষ্টি করা, সম্পর্ক নষ্ট করা।
শুধু দুই এমপি’র সম্পর্কে ফাটলই নয়, বিষয়টিকে ইস্যু করে কমিউনিটিকেও বিভক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে ওই গ্রুপটি। ডেপুটি লিডার নির্বাচনে প্রার্থিতা নিশ্চিতে কমপক্ষে ৩৫ এমপি’র সমর্থন না পাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে রুশনারা বাদ পড়লে কোন কোন স্থানীয় বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে গ্রুপটির এবারের পরিকল্পিত আপ্রচার ‘টিউলিপ ভোট না দেয়ায় ডেপুটি লিডার পদে প্রার্থী হতে পারেননি রুশনারা। আর খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই টিউলিপ এটি করেছেন’। স্থানীয় কোন কোন অনলাইনে এই নিউজ প্রচার হওয়ার পর ওই গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজ লিঙ্কটি ছড়িয়ে দিয়ে রুশনারা-টিউলিপের সম্পর্কে ফাটল ও কমিউনিটি বিভক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে লেবার পার্টির পরাজয়ের পর এড মিলিব্যান্ড দলীয় নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করলে নতুন নেতা নির্বাচনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ডেপুটি লিডার হ্যারিয়েট হ্যারমেন অস্থায়ী লিডারের দায়িত্ব গ্রহণ করে ঘোষণা দেন, তিনিও আর ডেপুটি লিডার থাকতে চান না। সঙ্গত কারণেই দুই পদ পূরণেই প্রক্রিয়া শুরু করে পার্টি। ডেপুটি লিডার পদে লেবার পার্টির বেশ কজন এমপি’র প্রার্থিতা ঘোষণার অনেক পর গত মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলীও নিজেকে ডেপুটি লিডার পদের নির্বাচনী দৌড়ে সামিল করেন।
লেবার পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ডেপুটি লিডার পদে প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে ৩৫ জন নির্বাচিত এমপির সমর্থন পেতে হয়। রুশনারা আলী নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে দেরিতে সিদ্ধান্ত নেয়ায় এর আগেই ডেপুটি লিডার পদে এঞ্জেলা এগলি এমপি’র প্রতি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন।
টিউলিপ শুরু থেকেই যখন এঞ্জেলার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছিলেন, তখনও তিনি জানতেন না রুশনারা প্রার্থী হচ্ছেন। চলতি মাসের ১১ জুন টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র নির্বাচনের ভোট গণনা কেন্দ্রে সর্বশেষ রুশনারা আলীর সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। ডেপুটি লিডার নির্বাচন সামনে রেখে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে তাঁর একটি সাক্ষাতকার নেয়ার আগ্রহের কথা জানালে রুশনারা বলেন, ‘আগে দেখে নিই নির্বাচনী প্রার্থিতায় ঠিকে থাকতে পারছি কি না। যদি ঠিকতে না পারি তবে এই ইস্যুতে আর সাক্ষাতকার দিয়ে কি লাভ?’ তিনি জানান ১৭ জুন, বুধবার প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সংবর্ধনায় বেশ কজন ব্রিটিশ এমপি উপস্থিত থাকলেও বিশেষ অসুবিধার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি রুশনারা আলী ও রূপা হক এমপি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে হাউস অব কমন্সে অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের দেয়া রিশিপশনে এই দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি যোগ দিলেও আওয়ামী লীগের দেয়া সংবর্ধনায় তাদের অনুপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চালায় বঙ্গবন্ধু পরিবার বিরোধী ওই গ্রুপটি।
এদিকে, খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনায় যোগ দেননি বলে টিউলিপ রুশনারাকে সমর্থন দেননি, এমন অপপ্রচারে খোদ রুশনারা আলী এমপিও বিব্রত।
রুশনারার মিডিয়া কর্মকর্তা সৈয়দ মনসুর উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনে রুশনারা আলী নিজেই খুব মর্মাহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় যাননি বলে টিউলিপ রুশনারাকে সমর্থন দেননি এমন অপপ্রচার অস্বীকার করে সৈয়দ মনসুর বলেন, রুশনারার প্রার্থিতা ঘোষণার অনেক আগেই এঞ্জেলা এগলিকে সমর্থন দিয়েছেন টিউলিপ। রুশনারা যখন প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন টিউলিপ তখন রিতীমত হতভম্ব, এমনটি জানিয়ে সৈয়দ মনসুর বলেন, ওইসময় এঞ্জেলা এগলির পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে রুশনারাকে আবার সমর্থন দিতে চেয়েছিলেন টিউলিপ।
কিন্তু রুশনারা এতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে পার্টি কলিগরা মনে করতে পারে আমরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিরা দল পাকাচ্ছি। রুশনারা এসময় টিউলিপকে এও বলেন, ‘তোমার এক ভোটের অভাবে আমার সমস্যা হবে না, আর যদি দেখি এক ভোটের জন্যে সমস্যা হচ্ছে, তখন আমি তোমাকে বলবো’। সৈয়দ মনসুর কোন কোন অনলাইনে এমন মিথ্যে অপপ্রচারে রুশনারা আলী এমপি’র পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ওই অনলাইনগুলোর নিউজ করার আগে উচিত ছিল রুশনারার মিডিয়া কর্মকর্তা হিসেবে আমার সঙ্গে যোগোযোগ করা। তাহলে সঠিক তথ্যটি আমি তাদের দিতে পারতাম। কিন্তু সেটি না করে তারা এমন একটি ভুল সংবাদ পরিবেশন করলো যা আমাদের কমিউনিটি ঐক্যে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
গত ১৭ জুন বন্ধ হয় লেবার পার্টির লিডারশীপ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রক্রিয়া। ডেপুটি লিডার পদে লড়তে মোট ৩৫ এমপি’র সমর্থন প্রয়োজন হলেও মাত্র ২৫ এমপি’র সমর্থন পেয়ে রুশনারা আলী ছিটকে পড়েন ডেপুটি লিডার পদের প্রার্থিতা থেকে। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে লেবার পার্টির লিডারশীপ নির্বাচন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
জেডএম/